রিফাত হত্যার পেছনে স্ত্রীর পরকীয়া ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০১৯, ০৪:১১ পিএম রিফাত হত্যার পেছনে স্ত্রীর পরকীয়া ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
হাসপাতাল মর্গে রিফাতের বন্ধুদের তোপের মুখে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর

স্ত্রীর পরকীয়া এবং মাদক সংশ্লিষ্টতার কারণেই বরগুনার কলেজছাত্র রিফাত শরীফ খুন হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। নিহতের স্বজন ও তার বন্ধু মহল এমন অভিযোগ তুলেছেন। আর এ নিয়ে নিহতের শ্বশুর মোজাম্মেল হোসেন কিশোরকে লাঞ্ছিতও করেন রিফাতের বন্ধুরা।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের মর্গ চত্বরে রিফাতের শ্বশুরের সাথে এ ঘটনা ঘটে। এসময় তারা হত্যাকারীদের পাশাপাশি মিন্নি’রও বিচার দাবি করেন। এ দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বরগুনা সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, পুলিশ লাইন এলাকার মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের মেয়ে বরগুনা সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি। গত দু’মাস পূর্বে বরগুনা সরকারি কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের মাঠাইল লবনগোলা এলাকার দুলাল শরীফের ছেলে রিফাত শরীফের সাথে মিন্নি’র বিয়ে হয়।

বিয়ের পরেও এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী ও একাধিক মামলার আসামি নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নি’র পরকীয়া প্রেম চলছিল। যদিও নয়ন বন্ড মিন্নিকে তার বিয়ে করা স্ত্রী দাবি করে। এ নিয়েই নয়নের সাথে বিরোধ হয় রিফাতের।

রিফাতের বন্ধু সানজিদ অভিযোগ করে বলেন, রিফাতের মৃত্যুর জন্য তার স্ত্রী মিন্নিই দায়ী। কেননা মিন্নি নিজেই মাদকাসক্ত ছিল। নয়নের বাড়িতে মাদকের যে আসর বসত সেই আসরের সদস্য ছিল মিন্নি। যা বরগুনাবাসী সবাই জানে। তাছাড়া রিফাতের পূর্বে নয়নের সাথে মিন্নির গোপনে বিয়েও হয়।

সানজিদ বলেন, নিহত রিফাত ও হত্যাকারী নয়ন দু’জনে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। ২০১১ সালে তারা দু’জন একই সাথে বরগুনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে। রিফাতের মিন্নি’র বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়।

তার মধ্যে বিয়ের পর মিন্নির সাথে নয়নকে দেখা করতে দিচ্ছিলো না রিফাত। তাই নয়ন মিন্নিকে নিয়ে তোলা বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে। এ নিয়ে নয়ন ও রিফাতের মধ্যকার বিরোধ আরো তুঙ্গে ওঠে। ঘটনার দিন অর্থাৎ বুধবার সকালে রিফাত তার স্ত্রী মিন্নিকে কলেজে দিয়ে পার্শ্ববর্তী বাজারে যায়। সেখান থেকে পুনরায় স্ত্রীকে নিয়ে যেতে কলেজে আসে রিফাত।

একই সময় নয়ন মিন্নিকে তার সাথে যাওয়ার জন্য বলে। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় রিফাত। এ কারণেই নয়ন তার সহযোগী রিফাত ফরাজী, চন্দনসহ ১০/১২ জন মিলে মিন্নির স্বামী রিফাতের ওপর হামলা করে। তার মধ্যেই নয়ন বরগুনা সরকারি কলেজ সংলগ্ন বাসা থেকে ধারালো অস্ত্র এনে রিফাতের ওপর হামলা করে। তাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করে।

রিফাতের অপর বন্ধু ও বরগুনা পৌরসভার প্যানেল মেয়রের ছেলে জন বলেন, নয়ন এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। ২০১২ সালে ১২ লক্ষাধিক টাকার মাদকের চালন নিয়ে আটক হয়েছিল। তাছাড়া মিন্নি নিজেই নয়নকে গোপনে বিয়ে এবং পরে তালাক দিয়ে রিফাতকে বিয়ে করে।

তিনি বলেন, রিফাত ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের কর্মী ছিল। কিন্তু বিয়ের পরে সে যুবলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়। সে এলাকার ভদ্র ছেলে ছিল। মিন্নিকে বিয়ে করার কারণেই নয়নের সাথে তার শত্রুতার সৃষ্টি হয়। রিফাতকে সরিয়ে দিয়ে মিন্নিকে পাওয়ার জন্যই নয়ন তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ জনের। তাই হত্যাকারীদের পাশাপাশি রিফাতের স্ত্রী মিন্নিরও বিচার দাবি নিহতের বন্ধু ও স্বজনদের।

রিফাতের স্ত্রীকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে খুনি নয়ন

অপরদিকে, অভিযুক্ত নয়ন বন্ডের মা সাহেদা বেগম সাংবাদিকদের জানান, সাত মাস পূর্বে কাজী অফিসে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে নয়নের সাথে মিন্নি’র বিয়ে হয়। পরে মিন্নি’র সাথে রিফাতের প্রেমের সম্পর্ক হয়। যা জানতে পেরে যায় নয়ন। এ নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায় তা বিবাহ বিচ্ছেদে রূপ নেয়। প্রায় দু’মাস পূর্বে মিন্নি নয়নকে তালাক দেয় এবং কিছুদিন পর রিফাতকে বিয়ে করে।

তবে নিহত রিফাতের শ্বশুর ও মিন্নি’র বাবা মোজ্জামেল হোসেন কিশোর মেয়ের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার মেয়ে কখনই মাদকের সংস্পর্শে যায়নি। এমনকি নয়নের সাথেও তার কোন সম্পর্ক ছিল না। বিয়ের পর থেকেই নয়ন, মিন্নিকে নিজের স্ত্রী দাবি করে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। যা রিফাত ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও জানে। এতে বাধা দেয়ার কারণেই রিফাতের ওপর হামলা হয় বলে দাবি তার।

বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বুধবার রাতেই ১২ জনকে আসামি করে নিহতের বাবা একটি মামলা দায়ের করেছেন। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে চন্দন নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে বরগুনার প্রতিটি উপজেলার সড়ক ও নৌপথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বস্ত সোর্স নিয়োগ ও পুলিশের তল্লাশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

এসপি বলেন, ঘটনার মূল হোতা নয়ন বন্ড অনেক আগে থেকেই আলোচিত। ইতিপূর্বে সে বেশ কয়েকবার মাদকসহ আটক হয়। তার বিরুদ্ধে ১০/১২টি মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। খুব দ্রুতই তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে জানিয়ে এসপি বলেন, হত্যার রহস্য পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মূল হোতা নয়নকে গ্রেপ্তার করা গেলে এ রহস্য উন্মোচন হবে।

কেএসটি

আরও সংবাদ