শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলিবর্ষণ

৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনের যাবজ্জীবন

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০১৯, ১২:৩৫ পিএম ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনের যাবজ্জীবন
পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে কড়া নিরাপত্তায় আসামিরা - ছবি : জাগরণ

পাবনার ঈশ্বরদীতে বহুল আলোচিত তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে গুলিবর্ষণের মামলার রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে মামলায় ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে প্রত্যেককে আরো ২ বছর বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে প্রত্যেককে আরো ১ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।

আজ বুধবার (৩ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক রুস্তম আলী এ আদেশ দেন। এসময় মোট ৫২ আসামির মধ্যে ৩২ জন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। ৫ জন আসামি মারা গেছেন। বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোখলেছুর রহমান বাবলু, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, জেলা বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান আখতার, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি রেজাউল করিম শাহিন, বিএনপি নেতা অটল, ঈশ্বরদী স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আজিজুর রহমান শাহিন, পৌর যুবদলের সভাপতি শ্যামল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মাহবুবুর রহমান পলাশ, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সম্পাদক শামসুল আলম। এদের মধ্যে পলাতক একজন হলেন জাকারিয়া পিন্টু।

যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- আমিনুর ইসলাম ওরফে আমিন (পলাতক), আজাদ হোসেন, ইসমাইল হোসেন ওরফে জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, সামসুর রহমান ওরফে সিমু, আনিছুর রহমান ওরফে সেকম (পলাতক), আক্কেল আলী, রবি (পালাতক), এনাম, কাশেম ওরফে হালট কাশেম (পলাতক), কালা বাবু (পলাতক), মামুন-১ (পলাতক), মামুন-২ (পলাতক), সেলিম আহমেদ, কল্লোল, তুহিন, শাহ আলম লিটন, আব্দুল্লা আল মামুন ওরফে রিপন, লাইজু (পলাতক), আব্দুল জব্বার, পলাশ, হাকিম উদ্দিন ওরফে টেনু, আলমগীর, আবুল কালাম (পালাতক), একেএম ফিরোজুল ইসলাম।

১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নেফাউর রহমান ওরফে রাজু, আজমল হোসেন ওরফে ডাব্লু, আনোয়ার হোসেন জনি, রনো (পলাতক), বরকত, চাঁদ আলী (পলাতক), এনামুল কবির, মোক্তার, হাফিজুর রহমান মুকুল, হুমায়ন কবির দুলাল (পলাতক), জামরুল (পলাতক) তুহিন বিন সিদ্দিক, ফজলুর রহমান।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পিপি অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান মুক্তা, এপিপি অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ হোসেন লিটন, অ্যাডভোকেট গোলাম হাসনায়েন ও অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ বাবু। আর আসামি ক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার ও অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম গ্যাদা।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ হোসেন লিটন জানান, ২৫ বছর পর দেয়া মামলার রায়ে তারা সন্তুষ্ট। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার বলেন, এ রায়ে সন্তুষ্ট নন তারা। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত রায় দেয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান তিনি।

মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল।

এ বিষয়ে পাবনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তোতা বলেন, রায় নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। কোনো কর্মসূচিও নেই। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় মামলার মোকাবিলা করা হবে।

১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় কর্মসূচিতে ট্রেনবহর নিয়ে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন। পথে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনে তাকে বহনকারী ট্রেনবহর যাত্রাবিরতি করলে ওই ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়।

পরে তৎকালীন ঈশ্বরদী জিআরপি থানার ওসি নজরুল ইসলাম বাদি হয়ে ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর মামলাটি পুনঃতদন্ত করে পুলিশ। পরে সিআইডি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল ৫২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।

এফসি

আরও সংবাদ