গাইবান্ধা থেকে ঢাকাগামী সকল চেয়ারকোচ বাস তৃতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে। ঢাকা থেকেও কোন বাস গাইবান্ধায় আসেনি। এদিকে, দুইদিনেও বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় ঢাকাগামী জেলার যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
অতিরিক্ত চাঁদা আদায় ও শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে বাস মালিকদের দ্বন্দ্বের জের ধরে শনিবার (০৬ জুলাই) সকাল থেকে ঢাকাগামী সকল বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় বাস মালিকরা। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে অন্যান্য বাস চলাচল করছে। এছাড়া ঢাকাগামী কিছু লোকাল বাসও চলাচল করতে দেখা গেছে।
দুইদিন ধরে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় জেলার যাত্রীরা পীরগঞ্জ, ধাপেরহাট, পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ থেকে রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে আসা বাসে ঢাকায় যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার ট্রেনসহ বিকল্প যানবাহনে করে ঢাকা যাচ্ছেন। এতে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে।
রোববার (০৭ জুলাই) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গাইবান্ধা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও শহরের ডিবি রোডে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাগামী সকল বাসের কাউন্টারগুলো বন্ধ রয়েছে। এসময় অনেক যাত্রীকে আলহামরা, এসআর, শ্যামলী, হানিফ, একতা, অরিণসহ ঢাকাগামী বিভিন্ন বাস কাউন্টারগুলোর সামনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
সাদুল্লাপুর থেকে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, তিনদিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন তিনি। এখন পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফিরতে বাস কাউন্টারে এসে বাস চলাচল বন্ধের কথা জানতে পেরে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ঢাকায় পৌঁছাতে ট্রেন কিংবা বিকল্প পথে রংপুর থেকে যাওয়ার চিন্তা করছেন তিনি।
শহরের ব্যবসায়ী লেবু মিয়া বলেন, দুইদিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকায় যেতে পারছেন না। ট্রেনে যাওয়ার চেষ্টা করেও টিকিট পাননি। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ঢাকা যাওয়ার জন্য অনেক যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে আইরিন বেগম নামে এক যাত্রী বলেন, ঢাকা থেকে গত সপ্তাহে বাড়ি আসেন তিনি। ঢাকা ফিরতে তিনদিন আগে রোববার সকাল সাড়ে ১১টার আলহামরা পরিবহনের টিকিট কিনে রাখেন। এখন টার্মিনালে এসে বাস চলাচল বন্ধের কথা জেনে চিন্তায় পড়েছেন। পরে কাউন্টার থেকে টিকিটের টাকা ফেরত নিয়েছেন। তবে এখন কিভাবে ঢাকায় যাবেন সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি।
বাস মালিক ও শ্রমিকরা জানান, ঢাকাগামী প্রতিটি চেয়ারকোচ বাস থেকে ৩৬০ টাকা করে মালিক সমিতির নামে শ্রমিক ইউনিয়ন আদায় করে আসছিলেন। কিন্তু কিছুদিন ধরে ৩৬০ টাকার পরিবর্তে ৪৪০ টাকা করে আদায় করছেন তারা। তাদের অভিযোগ, অতিরিক্ত চাঁদা আদায়সহ শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা নানা কারণে পলাশবাড়ি ও গোবিন্দগঞ্জ রুটে ঢাকাগামী বাসের স্টাফদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এতে প্রায়ই বাস স্টাফদের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের মধ্যে তর্কবির্তকসহ মারধরের ঘটনাও ঘটছে।
অতিরিক্ত চাঁদা, খারাপ ব্যবহারসহ তাদের হয়রানির ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চাঁদা আদায় ও খারাপ আচরণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। দ্রুত সমস্যা সমাধান না হলে পরবর্তীতে বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন বাস মালিকরা।
আলহামরা পরিবহণের গাইবান্ধা কাউন্টারের ম্যানেজার পলাশ বলেন, অতিরিক্ত চাঁদা ও শ্রমিক নেতাদের খারাপ আচরণের কারণে বাস মালিকসহ স্টাফরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। বারবার চেষ্টা করেও এসব সমস্যার সমাধান হয়নি। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
এসআর পরিবহনের সুপারভাইজার প্লাবন সরকার বলেন, দুদিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ডিউটি পালন করতে পারছিনা। এতে দৈনিক হাজিরার টাকা না পেয়ে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। সমস্যা সমাধানে মালিক ও শ্রমিক নেতাদের দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান তিনি।
গাইবান্ধা জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ স ম রুহুল হক নান্নু বলেন, বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকাগামী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বাস মালিক, শ্রমিক ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি আজ সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে মধ্যে সমাধান হবে বলেও আশা করেন তিনি।
টিএফ