শিক্ষককে শোকজ

ধর্ষণের শিকার ছাত্রীকে স্কুল থেকে বের করে দিলো শিক্ষক

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০১৯, ১১:৫৯ এএম ধর্ষণের শিকার ছাত্রীকে স্কুল থেকে বের করে দিলো শিক্ষক

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় ধর্ষণের শিকার এক ছাত্রীকে প্রধান শিক্ষক স্কুল থেকে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নে উত্তর যশলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা আক্তারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন নির্যাতিতার মা। 
তবে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি তাকে কিছু দিন স্কুলে আসতে নিষেধ করেছিলাম।

নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর মা জানান, গত ৮ জুলাই তার মেয়েকে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে প্রধান শিক্ষক তাকে ডেকে নিয়ে মেয়েকে আর স্কুলে পাঠাতে নিষেধ করেন। তবে তিনি মেয়েকে যদি মাদ্রাসা অথবা অন্য কোন স্কুলে পড়ান তাহলে তাকে টিসি দেবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন।  

এ ব্যাপারে সোমবার লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খাঁন বলেন, আমরা অভিযোগ পাওয়া পর ওই প্রধান শিক্ষককে রোববার ডেকে এনেছিলাম। প্রধান শিক্ষিকার মৌখিক ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয়। তাই আমরা তাকে শোকজ করেছি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টা প্রক্রিয়াধীন আছে।

এ প্রসঙ্গে ওই শিক্ষিকাকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি। পড়ে কথা বলবো। এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

এর আগে শনিবার (১৩ জুলাই) এ অভিযোগের ব্যাপারে উত্তর যশলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা আক্তার বলেন, আমি ছাত্রীকে স্কুল থেকে বের করে দেইনি। তবে তাকে কয়েকদিন স্কুলে আসতে নিষেধ করেছিলাম। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্কুলে আসতে বলেছি। তার অভিভাবকের অভিযোগের কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে আমাকে রোববার ও সোমবার (১৪ এবং ১৫ জুলাই) যেতে বলা হয়েছে।

শনিবার (১৩ জুলাই) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খাঁনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শিশু নির্যাতনের ঘটনাটি তিনি জানার পরও বিষয়টি আমাদের জানাননি। উল্টো অসহায় মেয়েটিকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছেন। তার উচিৎ ছিল শিশুটির পাশে দাঁড়িয়ে বাদি হয়ে মামলা করা। কিন্তু তিনি নির্যাতিত শিশুটির পাশে না দাঁড়িয়ে বরং তাকে আরও নির্যাতন করেছেন। আমরা প্রধান শিক্ষিকাকে ডেকেছি। এ বিষয়ে তার বক্তব্য শুনে এবং তদন্ত করে আইনগতসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লৌহজং থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মো. আলমগীর হোসাইন বলেন, নির্যাতিত শিশুটিকে প্রধান শিক্ষিক স্কুল থেকে বের করে দিয়েছেন শুনে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি জানিয়েছি।

প্রসঙ্গত, রোববার ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ধর্ষক আলাউদ্দিন হাওলাদার (৫৫) ও সালিশকারী খলিলুর রহমান শেখকে কোর্টে হাজির করা হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হলে রোববার বিচারের দিন ধার্য করেন আদালত।
রোববার তাদের ধর্ষণের অভিযোগে শুক্রবার বিকালে লৌহজং থানায় তিন জনকে আসামি মামলা করেন ভুক্তভোগীর শিশুর মা।

উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন সকাল সাড়ে ১০টা দিকে প্রতিবেশীর বাড়িতে যাওয়ার সময় আলাউদ্দিন হাওলাদার ওই শিশুকে আটকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেয়। ওই শিশু বাসায় এসে তার মাকে সব জানায়। পরে তার মা স্থানীয় মাদবর খলিলুর রহমান শেখ ও করিম ছৈয়ালকে বিষয়টি জানালে তারা আপোষ মীমাংসা করার কথাসহ মামলার প্রমাণ করে। কিছুদিন পর তারা বিষয়টি পুলিশ বা অন্য কাউকে জানাতে নিষেধ করে আলাউদ্দিনকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। পরে শুক্রবার বিকালে লৌহজং থানায় ধর্ষক আলাউদ্দিন হাওলাদার (৫৫) ও সালিশকারী খলিলুর রহমান শেখ, করিম ছৈয়াল তিন জনকে আসামি মামলা করেন ভুক্তভোগীর শিশুর মা।

কেএসটি