বরগুনায় প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ লাইনে আনা হয়। সেখানে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত ৯টার দিকে বরগুনার গোয়েন্দা পুলিশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মিন্নিকেগ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বরগুনা জেলা বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার জানান, মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য এ মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে (২০) সকালে ডেকে এনে মামলার ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও দীর্ঘ সময় ধরে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এবং সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মিন্নিকে রাত ৯টায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মিন্নিকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করে রাত পৌনে ১০টায় পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে সকাল ৯টায় বরগুনা পৌরসভার মাইঠা এলাকার নিজ বাসা থেকে মিন্নিকে পুলিশ লাইনে নেয়া হয়। এ সময় মিন্নির সঙ্গে যান তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। তখন বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানিয়েছিলেন, রিফাত হত্যার আসামিদের শনাক্তকরণের পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিন্নি ও তার পরিবারকে পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়েছে ।
জানা গেছে, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মিন্নি হামলাকারী সবাইকে চিনতে না পারার কথা জানালেও নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও তার ভাই রিশান ফরাজীর নাম বলেছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে কলেজছাত্র রিফাত শরীফকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে বন্ড বাহিনী। বিকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
হামলার ঘটনার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। সেখানে দেখা যায়, দুই যুবক রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করছে। তার স্ত্রী মিন্নি তাকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
তবে হত্যার ঘটনায় ৩টি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হলে রিফাতের হত্যার ঘটনার সঙ্গে মিন্নির সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। সর্বশেষ রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ তার ছেলের হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন এবং তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান। সেদিন ‘মিন্নি হত্যাকাণ্ডে জড়িত’ এমন সন্দেহের পেছনে ১০টি কারণও বলেন তিনি। তার সন্দেহের বিষয়টিকে আমলে নেয় পুলিশ।
তবে এর পরদিন মিন্নি পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বরগুনায় যারা ০০৭ (বন্ড) গ্রুপ সৃষ্টি করেছেন, তারা খুবই ক্ষমতাবান ও অর্থশালী। তারা রিফাত হত্যার বিচারকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য আমার শ্বশুরকে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছে।
রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২ জুলাই ভোররাতে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত ৩ জনসহ ৭ আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনায় বর্তমানে ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
বিএস/ এফসি