ইউপি সদস্য নাজমা ও তার স্বামীর উৎকোচ বাণিজ্য, অতিষ্ঠ বেতাগীবাসী

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ১২, ২০২০, ০৫:১১ পিএম ইউপি সদস্য নাজমা ও তার স্বামীর উৎকোচ বাণিজ্য, অতিষ্ঠ বেতাগীবাসী

বরগুনার বেতাগী উপজেলার ৬ নং কাজিরাবাদ ইউনিয়নে ১,২,৩ ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য নাজমা সরকারি চাল দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় গরিব, দুস্থ, অসহায়, বিধবা, জেলেদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরকারি বিভিন্ন সহায়তা দেয়ার কথা বলে উৎকোচ গ্রহণের একাধিক অভিযোগ রয়েছে ওই নারী সদস্যের স্বামী স্বপনের বিরুদ্ধে। বিধবা ভাতা, জেলেদের চাল, ভিজিএফ এর তালিকায় নাম দেয়ার কথা বলে গরিব অসহায় মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

রোববার (১০ মে) রাত দশটায় নাজমার স্বামী স্বপন উৎকোচ গ্রহণের সময় একই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য এবং স্থানীয় জনসাধারণের হাতে টাকাসহ ধরা পড়ে।

ভুক্তভোগী স্থানীয় জাকিরকে জেলে তালিকায় নাম দেবে জানিয়ে স্বপন ২০০০ টাকা নিয়ে তার বাড়িতে যেতে বলে। জাকির ১০০০ টাকা নিয়ে গেলে তা গ্রহণ করে আরও ১০০০ টাকা দাবি করে স্বপন, অন্যথায় তার নাম তালিকাভুক্ত করার অপারগতা জানায় স্বপন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জাকির স্থানীয় আরও ইউপি সদস্য এবং এলাকাবাসীকে ফোনে স্বপনের বাড়ি পাশে মাদ্রাসা এলাকায় আসতে বলে। তারা এসে স্বপনকে টাকা সহ আটক করে।

ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় জেলে লতিফ, জাফর, আলম সহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, স্বপন তাদের কাছে এই বলে টাকা চায় যে, জেলে তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে দিবে। প্রতি জেলেদের কাছ থেকে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা করে বিভিন্ন সময়ে স্বপন উৎকোচ নেয় বলে তারা জানায়। এক পর্যায়ে নানান অজুহাতে টাকাসহ ওই স্থান ত্যাগ করেন স্বপন।

একাধিক এলাকাবাসী উক্ত নারী সদস্যের স্বামীর বিরুদ্ধে জাগরণ প্রতিনিধির কাছে অভিযোগ করেন এবং আবুল নামের একজন স্থানীয়, কাজিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত স্বপন তার স্ত্রী নাজমাকে দিয়ে ভুক্তভোগীর স্ত্রীর নাম মাতৃত্বকালীন ভাতায় তালিকাভুক্ত করে দেবেন বলে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৫০০ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে। ১ম কিস্তির টাকা পাওয়ার পর আরও ১০০০ টাকা গ্রহণ করে। সর্বশেষ তার স্ত্রী বাড়িতে অনুপস্থিত থাকায় পুনরায় ১০০০ টাকা উৎকোচ নেয়। ভুক্তভোগীর কাছ হতে সর্বমোট ৫৫০০ টাকা মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় নাম ওঠাবার কথা বলে নেয়া হয়েছে। এমন করে এলাকার সহজ সরল মানুষদের বিভিন্নভাবে ভুল বুঝিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ  টাকা। তার বিরুদ্ধে বিধবা ভাতা, জেলেদের চাল, ভিজিএফ নাম দেয়ার নাম কথা বলে গরিব অসহায় মানুষের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগ রয়েছে।

উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে কাজিরাবাদ ইউপিতে এক জরুরি সভা ডাকা হয়। উক্ত সভায় ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন সহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা ঘটনার সত্যতা পেয়ে অভিযুক্ত সদস্য নাজমাকে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ইউপির সব ধরনের কাজ করা হতে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

এ বিষয়ে নাজমার স্বামী স্বপনের বক্তব্য জানতে চাইলে সে কৌশল করে এড়িয়ে যায়।

স্থানীয়রা আরও জানায়, স্বপন বিভিন্ন সময়ে টাকা নিয়ে জেলেদের নাম দেয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, জেলেদের চাল, ভিজিএফ সহায়তায় নাম দেয়ার কথা বলে জনপ্রতি ১০০০ থেকে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত  হাতিয়ে নিচ্ছে।

 কাজিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন জানান- আমি ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তার প্রেক্ষিতে ইউপি সদস্যদের সম্মতিতে নাজমা আক্তারকে করোনাকালীন সব ধরনের কার্যক্রম হতে বিরত রাখার রেজুলেশন পাস হয়েছে।

এই ব্যাপারে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব আহসান বলেন, আমিও শুনেছি ইউপি একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয় জনসাধারণ এই বিষয়ে সরকারের কাছে ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছে।

এসএমএম

আরও সংবাদ