বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আকন মোহাম্মদ সহিদের বিরুদ্ধে জেলেদের সহায়তার চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তালিকায় একই জেলের নাম একাধিকবার দিয়ে নতুন কৌশলে চাল আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছেন। এ সংক্রান্ত প্রমাণও মিলেছে।
জানা গেছে, মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা জেলের মধ্যে ভিজিএফ চাল বিতরণের জন্য বিশেষ কর্মসূচির আওয়াতায় গত ২৫ মার্চ কালমেঘা ইউনিয়নের ৬৯৫ জেলের মাঝে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে ২ মাসে ৮০ কেজি চাল প্রদান করে সরকার।
চাল বিতরণের তালিকা ও মাস্টাররোল ঘেটে দেখা গেছে, ওই ইউনিয়নের জেলেদের তালিকায় ৬৯৫ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জন জেলের নাম দুইবার করে রয়েছে। ওই ১৩টি নামের অনুকূলে ২ হাজার ৮০ কেজি চাল তালিকায় রয়েছে, এর মধ্যে তাদের বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮০ কেজি। এতে দেখা গেছে ১ হাজার ৪০ কেজি চাল বিতরণ না করে ওই চেয়ারম্যান তা আত্মসাত করেছে।
তালিকা যেসব জেলেদের নাম একাধিকবার রয়েছে তারা হলেন- কালমেঘা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের জেলে আলম পিতা কালু, মাস্টাররোলের ৭নং পৃষ্ঠার ২২৬ নম্বর সিরিয়াল এবং ১৭ পৃষ্ঠা ৪৩ নং সিরিয়াল দুইবার রয়েছে। ছালাম মোল্লা পিতা খবির মোল্লা, তালিকার ৭নং পৃষ্ঠার ২৩৮ নং সিরিয়াল ও ২০নং পৃষ্ঠার ১৫ নং সিরিয়াল। আলমাস পিতা তুজাম্বর ২০নং পৃষ্ঠার ৩২ সিরিয়াল ও ৭নং পৃষ্ঠার ২৩৩ নং সিরিয়াল। রাসেল পিতা সুলতানা প্যাদা, ২০নং পৃষ্ঠার ২৩ সিরিয়াল ও ১৭নং পৃষ্ঠার ৪০সিরিয়াল। জেলে সবুজ পিতা শাহ আলম, তালিকার ১৭ নং পৃষ্ঠার ৩৭ সিরিয়াল ও ২০ নং পৃষ্ঠার ৪৮ নং সিরিয়াল। খলিল পিতা হাকিম, ৮নং পৃষ্ঠার ২৫৬ সিরিয়াল ও ১৭নং পৃষ্ঠার ২৪৭ নং সিরিয়াল।ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের জেলে ফারুক পিতা পনু, তালিকার ১৯ নং পৃষ্ঠার ২৭ সিরিয়াল ও ৭নং পৃষ্ঠার ২২১ নং সিরিয়াল। জেলে বশির পিতা শামছু খা, তালিকায় ১৯ নং পৃষ্ঠার ২৮সিরিয়াল ও ৭ নং পৃষ্ঠার ২১৪ সিরিয়াল। ৬নং ওয়ার্ডের জেলে জসিম পিতা ইউসুফ শরিফ, তালিকার ৫নং পৃষ্ঠার ১১৭ সিরিয়াল ও ১৬ নং পৃষ্ঠার ২০ নং সিরিয়াল। নজরুল ইসলাম পিতা কাজেম আলি, তালিকার ৫ নং পৃষ্ঠার ১১০সিরিয়াল ও ১৬ নং পৃষ্ঠার ২৩ সিরিয়াল। জেলে আকুব্বর আলী পিতা ইছাহাক, তালিকার ৫নং পৃষ্ঠার ২১৩ নং সিরিয়াল ও ১৩ নং পৃষ্ঠার ২৪ সিরিয়াল। জেলে তরিকুল ইসলাম পিতা আমিরুল ইসলাম তালিকার ৫নং পৃষ্ঠার ১১৮ নং সিরিয়াল ও ১৩ নং পৃষ্ঠার ২৫ সিরিয়ালে প্রত্যেকের নাম দুইবার রয়েছে।
এ ব্যাপারে দুইবার চাল বিতরণ এর তালিকা নাম আসা জেলেরা বলেন, আমরা একবারই ৭০ কেজি চাল পেয়েছি। ১৬০ কেজি চাল আমাদের নামে তালিকায় আছে কিনা তা আমরা জানিনা।
কালমেঘা ইউপি চেয়ারম্যান আকন মোহাম্মদ সহিদ বলেন, মাস্টাররোলে একটু ভুলে আছে, বিতরণে একটু অনিয়ম হলেও দুর্নীতি হয়নি। বাকি চাল রাখা হয়েছে, এগুলো জেলেদের দেয়া হবে।
এতদিনেও কেন বিতরণ করা হয়নি তা জানতে চাইলে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তা ট্যাগ অফিসার রবীন্দ্রনাথ হাওলাদার বলেন, কালমেঘায় ওই সময় ৬৯০ জন জেলেকে ৮০ কেজি করে চাল বরাদ্দ ছিল। আমার উপস্থিততে চেয়ারম্যান সবার মাঝে চাল বিতরণ করেছেন। একই ব্যক্তির নামে দু’বার চাল দেয়ার সুযোগ নেই। চেয়ারম্যান যদি এমনটা করে থাকে তাহলে ভুল করেছেন।
পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, জেলেদের নাম তালিকা দুইবার দিয়ে চাল আত্মসাতের বিষয় খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এনএমএইচএল/এসএমএম