উত্তরবঙ্গের নৌপথে পণ্য পরিবহনের অন্যতম প্রবেশদ্বার পাবনার নগরবাড়ি-ঘাট। দেশের সবচেয়ে আধুনিক নগরবাড়ি নদীবন্দর নির্মাণে ২০১৮ সালে ৫১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর পাড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করে সরকার।
পাবনা-২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খন্দকার আজিজুল হক আরজুর প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-নজরে আন্তর্জাতিক মানের বন্দরের কাজ শুরু হয়।
বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ হলে মানুষের জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। গুটিয়ে যাওয়া ব্যবসা-বাণিজ্য ফের শুরু হবে। রাজধানীর সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসার প্রসার ঘটবে, সময় ও দূরত্ব কমে আসবে। বঙ্গবন্ধু সেতুর বিকল্প হিসেবে এ বন্দরের ব্যবহার বাড়বে।
সাবেক সাংসদ খন্দকার আরজু বলেন, "নগরবাড়ি ঘাটের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সেই স্বপ্ন বহুলাংশে পূরণ হলো।
পাবনা জেলা পরিষদের সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, "খন্দকার আরজু সংসদ সদস্য থাকাকালে যেসব উন্নয়ন হয়েছে, সবই দৃশ্যমান। আন্তর্জাতিক মানের নগরবাড়ি নদীবন্দর নির্মাণে তার সক্রিয় প্রচেষ্টা পাবনার জনগণ যুগের পর যুগ মনে রাখবে। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সংসদ সদস্য থাকাকালে মানুষের জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।"
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সার, সিমেন্ট, বালি, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য নগরবাড়ি নৌবন্দরে আসে। সেখান থেকে সড়ক পথে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে পরিবহন করা হয়। একইভাবে উত্তরাঞ্চলের মালামাল এ বন্দর দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়।
২০১৮ সালে নদীবন্দর নির্মাণে প্রকল্পের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)। প্রকল্পের প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছে আরসিসি জেটি নির্মাণ, নদী তীর সংরক্ষণ, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, আরসিসি ওপেন স্টোরেজ নির্মাণ, পার্কিং লট ও আন্তর্জাতিক পোর্ট রোড নির্মাণ, ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন, বন্দর ভবন, প্রশাসনিক ভবন, পরিদর্শন বাংলো, ডরমিটরি নির্মাণ, পাইলট হাউজ নির্মাণ, শ্রমিক বিশ্রামাগার ও টয়লেট নির্মাণ, গুদাম নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ড্রেনেজ, পানি সরবরাহ ও স্যুয়ারেজ নির্মাণ, মোবাইল হারবার ক্রেন, ফর্ক লিফট স্থাপন, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ও ১১-কেভি বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ। এই প্রকল্পের সময়কাল বৃদ্ধি করেছে সরকার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
আরসিসি জেটি নির্মাণ, নদী তীর সংরক্ষণ ও বিভিন্ন স্থাপনার কাজ এগিয়ে চলেছে বলে জানিয়েছেন বিআইডাব্লিউটিএ নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন পাঠান। নগরবাড়িতে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত নদীবন্দর নির্মাণের জন্য নদী তীরবর্তী ৩৬ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো অতিরিক্ত ব্যয় হয়নি। বাজার মূল্য অনুসারে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাবনা জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা।
নগরবাড়ি-ঘাট ও নলখোলা বনিক সমিতির সহ সভাপতি ইমান আলী বলেন, "সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজুর প্রচেষ্টায় নদীবন্দর নির্মাণে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। আধুনিক বন্দরে পরিণত হচ্ছে নগরবাড়ি।"
অবকাঠামো নির্মাণের পর বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য উঠানামা সহজ হবে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে এই পথে আমদানি-রপ্তানি আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। নগরবাড়ি-ঘাট দিয়ে উত্তরবঙ্গে নৌপথে পণ্য পরিবহন সহজ হওয়ায় অধিকাংশ আমদানিকারকরা বর্তমানে কোনো পোর্ট সুবিধা না থাকলেও নগরবাড়ি ঘাট দিয়ে পণ্য পরিবহন করে।
নগরবাড়ি-ঘাট দিয়ে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন, রুস্তম আলী ও বেলায়েত হোসেন বলেন, "এই এলাকার সাবেক এমপি খন্দকার আরজু সাহেবের প্রচেষ্টার আধুনিক বন্দর হচ্ছে। গুটিয়ে যাওয়া আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আবারও শুরু হবে।"