করোনাভাইরাসে দেশের অর্থনৈতিক খাতে যেমন সমস্যা হয়েছে, ঠিক তেমনি শিক্ষাখাতে দেখা দিয়েছে চরম ভোগান্তি। যার বেশিরভাগ প্রভাব পড়েছে মফস্বলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
বরগুনার বেতাগীতে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিনত হয়েছে গো-শালায়। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির উদাসীনতায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদানের পরিবেশ।
জানা যায়, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হন। ১৬ মার্চ সরকার ঘোষণা দেয়, ১৭ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্কুল, কলেজসহ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। তারপর থেকে করোনা প্রভাব বিস্তার করায় একের পর এক লকডাউনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধই থেকে যায়।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে জানা যায়, আগামী ১৩ জুন যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হারে (আক্রান্তের হার ৭ শতাংশের নিচে) থাকে তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।
এমন প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদক উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যান। উপজেলার ৯৯নং ঝিলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি কক্ষ গরুর ঘর করে রেখেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী বাসিন্দারা। তবে তাতে মাথা ব্যথা নেই প্রতিষ্ঠান প্রধান কিংবা ম্যানেজিং কমিটির। প্রতিষ্ঠানের চারদিক ঘুরে দেখা যায় ঝোপঝাড় আর ময়লা আবর্জনায় আচ্ছন্ন। প্রতিটি কক্ষ যেন গরু, ছাগলের দখলে। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে ৩-৫টি করে গরু বাঁধা রয়েছে। ছাদের উপরে চলে তাস খেলার আড্ডা।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ঝিলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক সরমিন জাহান বলেন, “করোনার পর থেকে বিদ্যালয়ের খোঁজ-খবর তেমন নেওয়া হয়নি। স্কুলে গরু-ছাগল রাখা হয়। আমি বাধা দিয়েছি তবে তারা এলাকার প্রভাবশালী ও প্রতিষ্ঠানের জমিদাতা হওয়ার কারণে কাউকে পরোয়া করেন না।”
উপজেলার ১২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অধিকাংশ বিদ্যালয়ের পরিবেশ নোংরা আর দুর্গন্ধে ভরপুর।
এছাড়াও উপজেলার দক্ষিণ হোসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাসন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বটতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর করুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাছুয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা একই রকম।
এছাড়াও উপজেলার কাইয়ালঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিবিচিনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার বারান্দা গোয়াল ঘরে পরিনত হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গির আলম ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুর রহমান বলেন, বেশ কিছুদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ ঢিলেঢালা হয়েছে। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সুহৃদ সালেহীন বলেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করবেন এবং তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।