এত ছুটি ভোগ করা, স্বামী স্ত্রী দুজনই পুলিশ সদস্য হিসাবে মুজিবনগর এবং মেহেরপুর সদরে কর্মরত, সুবিধার কথা চিন্তা করে কিছুদিনের মধ্যে তাকে স্ত্রীর কাছে মেহেরপুর সদরে পোস্টিং দেওয়ার পরও কেন পুলিশ সদস্য গুলি খেয়ে আত্মহত্যা করলো তা খুঁজছে পুলিশের তদন্তদল।
গত ২১ জুলাই নিজের সরকারী অস্ত্র মাথায় ঠেকিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছে মেহেরপুরের মুজিবনগর থানার রতনপুর পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত (কন্সটেবল নং ৫৪৩) সাইফুল ইসলাম। কেন এভাবে নিজেকে শেষ করলো পুলিশ সদস্য সাইফুল তার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না তার সহকর্মী, স্ত্রী সহ পুলিশের কেউ।
নিহত সাইফুলের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, ৯৪ সালে জন্ম নেওয়া সাইফুলের বাড়ি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার চাপড়া গ্রামে। তার পিতার নাম মোহাম্মদ আলী। চলতি বছরে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের ফজলুর সরকারের মেয়ে ফরিদা খাতুনের সাথে তার বিয়ে হয়। মেহেরপুরে দুজনেই চাকুরি করতেন সেই সুবাদে দুজনের পরিচয় হয় এবং পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে হয়। বয়সে স্বামী স্ত্রী দুজনে এক বছরের ছোট বড় ছিল। দুজনের বর্তমান কর্মস্থল ছিলো ২০ মিনিট দূরত্বের।
পুলিশ অফিস সূত্রে জানা গেছে, নতুন বিয়ে হওয়ায় সাইফুলের আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যেই তাকে ছুটি দিত। অনুরুপ ছুটি তার স্ত্রীও ভোগ করতো। দাম্পত্য জীবনও ছিল খুবই মধুর। গত ৬ মাসে সাইফুল ৫৪ দিন ছুটি ভোগ করেছে। শুধু তাই নয় দূরত্ব ঘুঁচাতে কর্তৃপক্ষ তাকে স্ত্রীর সাথে মেহেরপুর সদরে পোস্টিংয়ের দিয়েছিল। ছুটি বেশি ভোগ করায় এই ঈদে নিহত সাইফুল ছুটির কোন আবেদনও করেননি। ক্যাম্পে নাইট ডিউটি করাকালীন মাস্ক পড়া অবস্থায় তিনি নিজের অস্ত্রের গুলিতে নিজেই আত্মহত্যা করেন। তাহলে এমন সময় এমন কি হলো যে কারণে পুলিশ সদস্য নিজ অস্ত্র দিয়ে নিজেই আত্মহত্যা করলো। এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বমহলে। বিশেষ করে পুলিশ কতৃপক্ষ এই কারণ খুঁজতে শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের জন্য মেহেরপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলাম জানান, একজন তরুণ পুলিশ সদস্যের এমন মৃত্যু খুবই বেদনার। পুলিশ সুপার রাফিউল আলম স্যারের নির্দেশে এই আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ খুঁজতে তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি হয়েছে। একাধিক বিষয় মাথায় নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজও শুরু করে দিয়েছে। আশা করা যায় দ্রুতই বেরিয়ে আসবে এমন মৃত্যুর কারণ কি।
নিহতের চাচা লিটন হোসেন জানান, বিয়ে করতে গিয়ে এবং কিছু জমি কিনতে গিয়ে সে অর্থনৈতিক শুন্যতায় ভুগছিল। কাউকে কিছু দিতে পারবে না বলে এবার ঈদে বাড়ি আসেনি। এই সমস্ত নিয়ে চরম মানসিক অস্থিরতায় ভুগতো সে। নিজেকে ইদানিং খুব উদভ্রান্তের মত রাখতো। সব কথায় হতাশা প্রকাশ করতো। স্ত্রী ফরিদা খাতুন জানান, রাতেও তার সাথে মোবাইলে কথা হয়। হতাশার কথা বললে সান্তনা দিই। সবসময় পরিবার পরিজন নিয়ে বেশি চিন্ত করতো। তাই মানসিক বিকারগ্রস্থতার মধ্যে চলতো সব সময়।
জাগরণ/এমআর