শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুট

ফেরিতে ঢাকামুখি যাত্রীদের ভিড়

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২১, ০৪:৩৭ পিএম ফেরিতে ঢাকামুখি যাত্রীদের ভিড়

গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানা খোলার কারণেমুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথ দিয়ে হাজার হাজার যাত্রী পদ্মা পারাপার হচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাংলাবাজার এলাকায় ঢাকামুখীযাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে।অধিকাংশ ফেরিতে যানবাহনের পাশাপাশি শত শত যাত্রীকে পার হতে দেখা গেছে।

মুন্সীগঞ্জেরশিমুলিয়া ঘাটে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের চাপ ছিল তুলনামূলক অনেক কম। তবে রাজধানী ঢাকামুখি কর্মজীবী মানুষের উপচেপড়া ঢল ছিলো।

সরেজমিনে সকালে ঘাটে গিয়ে জানা গেছে, মাদারিপুর থেকে মো. রুহুল আমিন নামে এক যাত্রী তিন হাজার টাকা দিয়ে পরিবারে পরিজনকে নিয়ে সিএনজি অটোরিকশাতে করে বাংলাবাজার থেকে ফেরিতে চরে শিমুলিয়া ঘাটে এসেছেন। তারা ঢাকায় পোশাক কারখানায় যাবেন। তিনি বলেন, ঘাটে আসতে প্রতিটা চেকপোস্টে আমাদের থামানো হয়েছে। গনপরিবহন না থাকায় পায়ে হেটে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ঢাকায় যেতে হচ্ছে।

দিন মজুর সুমন মিয়া নামে একজন বলেন, সরকার লকডাউন দিছে, কিন্তু পেটে ভাত দেয় নি। কাম না করলে পরিবার নিয়া খামু কি। এ কারণে ঢাকায় কামলা দিতে যাচ্ছি। এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে শিমুলিয়া ঘাট পর্যন্ত এসেছি। আসতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
রাজধানী ঢাকার এক পোশাক কারখানায় কাজ করেন রুনা আক্তার। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি মাদারিপুর গেছিলেন। রোববার (১ আগস্ট) থেকে শিল্পকারখানা খুলছে, তাই কর্মস্থলে ফিরতে বৃহস্পতিবার ভোরে পদ্মা পাড়ি দিয়ে এসেছেন মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়াঘাটে। ফেরি পার হলেও শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছে কঠোর বিধিনিষেধে পরিবহন বন্ধ থাকায় গাড়ি না পেয়ে পড়েছেন মহা বিপাকে। কী করবেন, কীভাবে পৌঁছবেন গন্তব্যে, বুঝে উঠতে না পেরে শিমুলিয়াঘাট থেকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের দিকে পায়ে হেঁটেই যাত্রা শুরু করেন।

রুনা আক্তার জানান, সরকার গণপরিবহন বন্ধ রেখে গার্মেন্টস খুলেছে। ৫ আগস্ট না গেলে চাকরি থাকবে না। চাকরি বাঁচাতে এখন কষ্ট করে যেতে হচ্ছে। গাড়ি পাওয়ার জন্য রাস্তায় হাঁটছি।

মুন্সীগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব বলেন, ‘ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে ট্রাফিক ও লৌহজং থানার পুলিশের একাধিক চেকপোস্ট রয়েছে। জরুরি সেবাসমূহের দোকান ছাড়া সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। যারা খোলা রাখছেন তাদের বুঝিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। জেলায় কঠোর লকডাউন পালনে কার্যকর বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

পদ্মায় তীব্র স্রোত থাকায় একদিকে ফেরি চলাচলে সময় লাগছে বেশি, অন্যদিকে পেশাক কারখানা খোলাকে কেন্দ্র করে বাংলাবাজার ঘাট থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীদের শিমুলিয়াঘাটে ব্যক্তিগত গাড়ির বাড়তি চাপ রয়েছে। ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে ছোট-বড় ২শতাধিক যানবাহন।

শ্রীনগরের হাসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে কয়েকশ’ গাড়ি ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। শিমুলিয়াঘাটে গাড়ির চাপ ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে গাড়িগুলোকে এক্সপ্রেসওয়েতে রাখা হয়েছে। পচনশীল, শিশু খাদ্য ও জরুরি গাড়ি আটকানো হচ্ছে না। ঘাট থেকে সিগনাল দিলে গাড়ি পাঠানো হচ্ছে। স্বাভাবিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ট্রাকগুলো এখানে রাখা হয়েছে। ফেরি চলাচলে বেশি সময় লাগায় গাড়ি পারাপারেও দেরি হচ্ছে।’

বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়াঘাটের মেরিন কর্মকর্তা জানান, নদীতে পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটে যেতে ফেরিগুলোর দ্বিগুণ সময় লাগছে। প্রতিটি ফেরিকে স্রোতের বিপরীতে ও নদীতে ৩-৪ কিলোমিটার বেশি পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। স্রোতের বিপরীতে চলাচলে সক্ষম না হওয়ায় তিনটি ফেরি চলাচল করতে পারছে না।

লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ১০টি ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে যাত্রীদের। তবে যাত্রীদের সাথে বেড়েছে ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়াঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শফিকুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে এ রুটে ১০টি ফেরির মাধ্যমে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে ছোট-বড় ২ শতাধিক যানবাহন। লঞ্চ পারাপার বন্ধ রয়েছে।