ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে অবৈধভাবে এইচডি মদিনাতুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার ২৮টি গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির সুপারের বিরুদ্ধে। অবৈধ ভাবে গাছ বিক্রি করার অভিযোগে গত ৬ আগস্ট সকালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং এলাকাবাসী বিক্রি হওয়া গাছ গুলো আটকে রাখে। বর্তমানে স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছে গাছ গুলো জিম্মায় রাখা হয়েছে।
এদিকে কাউকে না জানানোর অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানের গাছ বিক্রির বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন্নেছা খানম, উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম মতিউর রহমান এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেনকে অবহিত করেছে এলাকার ইউপি সদস্য ও স্থানীয় লোকজন। তবে অবৈধ পন্থায় গাছ বিক্রির অভিযোগের বিষয়টি প্রত্যাখান করেছেন প্রতিষ্ঠানের সুপার। স্থানীয় কিছু লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলছে বলে দাবি তার।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মাঠ ভরাটের কথা বলে উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের এইচডি মদিনাতুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় ২৮টি গাছ গত কয়েক মাস আগে বিক্রি করেন প্রতিষ্ঠানটির সুপার মাওলানা মো. অহিদুল ইসলাম। গত দু-সপ্তাহ আগে গাছ গুলো কাটা শুরু হয়। বিক্রি করা গাছের মধ্যে মেহগনি এবং চম্বল এ দুই প্রজাতির গাছ রয়েছে। মাত্র ৫৯ হাজার ৫ শত টাকা মূল্যে এ ২৮টি গাছ তিনি স্থানীয় আবু তালেব নামে এক ব্যাপারীর কাছে বিক্রি করেন। বিক্রি হওয়া গাছ গুলো ইতিমধ্যে সবই কেটে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দেড় লাখ টাকা মূল্য রয়েছে গাছ গুলোর। অথচ তিনি মাত্র ৫৯ হাজার ৫ শত টাকায় গাছ গুলো বিক্রি করেছেন বলে সকলকে জানিয়েছেন। করোনার মধ্যে প্রতিষ্ঠান বন্ধ এই সুযোগে তিনি গাছ গুলো বিক্রি করে দিয়েছেন।
মাদরাসাটির অনেক দিন যাবত নির্বাচিত ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন।
এ ব্যাপারে ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কে এম আল-শাহারিয়ার জানান, গোপনে মাদরাসার গাছ গুলো বিক্রি করার খবর পেয়ে স্থানীয় বেশকিছু লোকজন আমাকে জানান। এ বিষয়ে আমি সুপারের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাকে জানান, মাঠ ভরাটের জন্য গাছ গুলো বিক্রি করা হয়েছে ৫৯ হাজার ৫ শত টাকায়। এটি রেজুলেশন করে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন সভাপতি হোসাইন মোহাম্মাদ আল মুজাহিদের অনুমতি নিয়ে বিক্রি করার কথা জানান। তবে ইউএনও’র কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, এ ধরনের কোন অনুমতি তিনি মাদরাসা সুপারকে দিয়ে আসেননি।
অভিযোগের বিষয়ে মাদরাসা সুপার মাওলানা মো. অহিদুল ইসলাম সকাল বিকাল দুই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে একবার বলেন, মাদরাসার ভবন এবং আশাপাশের লোকজনের জমির ক্ষতি হয় এ কারনে আমরা গাছ গুলো কাটার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে আবার দ্বিতীয়বার তার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, মাদরাসার ফার্নিচার তৈরীর জন্য গাছ গুলো কাটা হয়েছে। তবে গাছ গুলো সাইজে ছোট হওয়ায় এ দিয়ে ফার্নিচার তৈরির উপযুক্ত নয় বিধায় পরে বিক্রি করে দিয়েছি। প্রতিষ্ঠানের মোট ২৮টি গাছ ৫৯ হাজার ৫ শত টাকায় বিক্রি করা হয়েছে এবং মাদরাসার গেট নির্মাণ ও মাঠ ভরাটের কাজে বিক্রি করা এই অর্থ ব্যয় করা হবে বলে জানান তিনি ।
সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মাদ আল মুজাহিদের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, আমি উপজেলায় দায়িত্বরত অবস্থায় থাকাকালীন মাদরাসার গাছ বিক্রি করার কোন মৌখিক কিংবা লিখিত অনুমতি প্রতিষ্ঠানটির কাউকে দেয়নি।
বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফুন্নেছা খানম জানান, স্থানীয় লোকজন মৌখিক ভাবে বিষয়টি আমাকে অবহিত করলে মাদরাসা সুপারকে ডাকা হয়। আগের ইউএনও এখানে থাকাকালীন তিনি প্রতিষ্ঠানের কিছু গাছ বিক্রি করার জন্য রেজুলেশন করে অনুমতি নিয়েছেন বলে আমাকে জানান। তবে এ বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখা হবে।
জাগরণ/এমআর