চুয়াডাঙ্গায় পাট চাষে কৃষকদের স্বপ্ন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এ মৌসুমে পাটের আবাদ হয়েছে দ্বিগুণ। পানি ও পাট জাগ দেয়ার জায়গা সঙ্কটের কারনে চাষিরা তাদের জমি থেকে পাট কাটতে পারছে না। চাষিদের স্বল্প ব্যয়ে রিবন রেটিং পদ্বতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত বছর পাটের দাম ভাল পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩ হাজার ৭৯৭ হেক্টর বেশী জমিতে পাটের আবাদ করেছে চাষিরা। গত মৌসুমে চাষিরা পাটের আবাদ করেছিলো ১৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে। আর এবার আবাদ করেছে ২০ হাজার ৫২৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৭ হাজার ২৪৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০ হাজার ৫৩৫ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ১ হাজার ৬৯৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করেছে চাষিরা।
আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ ও ফলন ভাল হচ্ছে। চলতি মৌসুম হেক্টর প্রতি ফলন ৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরে ১৩ দশমিক ৫ বেল পাট উৎপন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাসনহাটি গ্রামের কৃষক মফিজুর জানান, দেড় বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করি। পাট ভাল হয়েছে। বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৩ মন পাটের ফলন হবে। তবে এলাকায় পাট জাগ দেয়ার পানি ও জায়গা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জাগ দেয়ার পানি ও জায়গা সঙ্কটের কারণে পাট কাটা শুরু করেনি। গত বছর পানি সঙ্কট ছিলোনা। তাছাড়া এ বছর পাটের বাজার ভাল না। বর্তমানে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা মন দরে পাট বিক্রি হচ্ছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদি গ্রামের আনারুল ইসলাম জানান, আমার ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ আছে। অতিবৃষ্টি হলে পাট জাগ দেয়ার কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু এবছর বৃষ্টিপাত হয়েছে খুবই কম। কোথাও পানি নেই। এ অবস্থায় পাট কাটার সময় হলেও, পাট জাগ দেয়ার অসুবিধার কথা ভেবে পাট কাটতে পারছেন না। এছাড়া গ্রামে পাট পচানো খুবই সমস্যা। গ্রামের গর্ত যা ছিল তা মাটি ভরাট করার কারণে পাট জাগ দেয়ার জায়গা নেই। বৃষ্টি না হলে গ্রামের গর্তে স্যালোমেশিন দিয়ে পানি উঠিয়ে পাট জাগ দিতে হবে। পাট পচানোর সমস্যার কারণে এবার লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্মোখিন হতে হবে।
জীবননগর উপজেলার হরিহরনগর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন জানান, ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এ বছর পানির সঙ্কট আছে। স্যালোমেশিন দিয়ে পানি তুলে পাট পচাতে হয়েছে। যেখানে নদী আছে সেখানে খরচ কম হয়। অনেক চাষি তাদের জমির পাট কেটে প্রতি আঁটি ৬ টাকা ব্যয় করে অন্যের জমিতে পাট জাগ দিচ্ছে। এরপর পাটের দাম চাষি না পেলে তারা বিকল্প আবাদে ঝুঁকবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সুফি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান জানান, লক্ষমাত্রার চেয়ে এবার পাটের আবাদ বেশ ভালো হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা পাট বিক্রি করে লাভবান হলে পাট চাষে তাদের আগ্রহ আরও বাড়বে। পানির অভাবে চাষি রা ভালভাবে পাট পচাতে পারেনা। আমরা চাষি দের কম ব্যয়ে রিবন রেটিং পদ্বতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছি।
জাগরণ/এমআর