ফোন করলেই অক্সিজেন নিয়ে হাজির স্বেচ্ছাসেবীরা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২১, ০১:৩৭ পিএম ফোন করলেই অক্সিজেন নিয়ে হাজির স্বেচ্ছাসেবীরা

সুনামগঞ্জে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত যেসকল গুরুতর রোগীরা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন, ফোন দিলেই তাদের অক্সিজেন সেবা দিতে হাজির হচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় এমন উদ্যোগ নিয়েছে দু’টি প্রতিষ্ঠান। তার একটি হচ্ছে জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, অন্যটি দৈনিক সুনামকণ্ঠ।

বাড়িতে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা পেয়ে যারপরনাই খুশি আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনরা।

প্রসঙ্গত, করোনা মহামারি শুরুর পর সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনে ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করে কর্তৃপক্ষ। শুরুতে এ ইউনিটে রোগী কম থাকলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ায় বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। কিন্তু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, কিংবা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তাদের চিকিৎসার জন্য এই ইউনিটে নেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ। হাসপাতালটিতে চালু হয়নি কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সিস্টেমও। যে কারণে জটিল রোগীদের সিলেটে নিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প থাকে না।

জানা যায়, এমন পরিস্থিতিতে করোনা আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদানের জন্য এগিয়ে আসে জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ও দৈনিক সুনামকণ্ঠ। জুলাইয়ের শেষ দিকে জেলা শহরে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা শুরু করে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। চিকিৎসকের পরামর্শপত্র দেখে সংগঠনের যুব ও তরুণ কর্মীরা রোগীদের বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সেবা দেন।

জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান পীর বলেন, করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর থেকেই সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, বিত্তহীনদের সহায়তা প্রদান, অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে রেড ক্রিসেন্ট। বর্তমানে রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সেবা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এটি চলমান থাকবে।

এদিকে, ৫ আগস্ট থেকে করোনা রোগীদের বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম চালু করে দৈনিক সুনামকণ্ঠ। পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. জিয়াউল হক এর যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছেন। ২১টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও পাঁচটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর দিয়ে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন তারা। তাদের ৩০ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী দিনের ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে রোগীদের বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সেবা দেন।

দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মো. জিয়াউল হক বলেন, বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সুবাদে আমি করোনা আক্রান্ত মানুষের কষ্ট দেখেছি। দেখেছি কিভাবে অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, অনেকে মারা যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জে বিনামূল্যে করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক বিজন সেন রায় বলেন, করোনা রোগীদের অক্সিজেন সেবা দিতে পেরে আমরা খুবই খুশি। এই মহামারিকালে সমাজের প্রতিটি বিত্তবান মানুষকে মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা উচিত।

সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ শামস উদ্দিন বলেন, রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত সিলিন্ডার অক্সিজেন রয়েছে। তারপরও বেসরকারিভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে অক্সিজেন সেবা কার্যক্রম আমাদের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আমরা স্বেচ্ছাসেবীদের বিনামূল্যে সিলিন্ডার রিফিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

জাগরণ/এমআর