গোপালগঞ্জে আসার পরে জানতে পারলাম জেলা শহরের ভেতর দিয়ে বৈরাগীর খাল নামে একটি খাল ছিল। স্থানীয়দের কাছে শুনেছি দীর্ঘ ৫০ বছর পূর্বে এই খালটি জোয়ারের পানিতে স্রোত বইতো। এই খালটি শহরের স্থানীয় মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল। কিন্তু, অযত্ন-অবহেলা ও যথাযথ নজরদারীর অভাবে অবৈধ দখলের কারণে নর্দমা ও ময়লার ভাগাড়ে পরিনত হয়। দুর্গন্ধে খালের পাশ দিয়ে যাতায়াত করাও খুব কষ্টের ছিল। খাল পাড়ের সড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের নাকে কাপড় দিয়ে চলতে হতো। জনগনের অসুবিধার কথা বিবেকচনা করে খালটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
স্থানীয়দের দীর্ঘ বছরের দাবীর পর অবশেষে মুক্তি মিলেছে আবর্জনার স্তুপ থেকে। খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। বর্তমান চিত্র দেখে বুঝার উপায় নেই যে, একটি দূর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত খাল ছিলো বৈরাগীর খালটি। স্বাধীনতার পর থানা পাড়া এলাকায় খালের উপর দিয়ে একটি রাস্তা তৈরী করায় বন্ধ হয়ে যায় মধুমতি নদীর সাথে খালের সংযোগ। এরপর থেকে আর জোয়ারের পানি প্রবেশ করেনি এই খালে। সঠিক নজরদারির অভাবে অবৈধভাবে দখল হতে থাকে খালের পাড়। শহরের বিভিন্ন স্থানের ময়লা আবর্জনা ফেলা হতো এই খালে। দুর্গন্ধে খাল পাড়ের মানুষের জীবন ছিলো অতিষ্ঠ। তাই তো স্থানীয়দের দীর্ঘ দিনের দাবী ছিলো খালটি সংস্কারের। এমনটি বলছিলেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা।
তিনি আরো বলেন, দেশের অন্যান্য জেলার মতো গোপালগঞ্জেও সরকারী জায়গা সরকারী খাল অবৈধ দখলের প্রবনতা ব্যাপক। বিভিন্ন স্থানে বার বার অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়ে সরকারী হালট ও সরকারী সম্পত্তি সরকারের দখলে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আমার নজরে আসে শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা বৈরাগীর খাল। যেটি একটি বদ্ধ জলাশয়ে পরিনত হয়ে শহরের ড্রেন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এরপরই আমি উদ্যোগ গ্রহন করি, যেকোন মূল্যে খালটি পুরনো আদলে নিয়ে আসার। গোপালগঞ্জ পৌরসভা ও গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় রাস্তা কেটে ব্রিজ তৈরী করে, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে, ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে, পুনঃখনন করে কাজটি করতে পেরেছি। খালটির দু’পাড়ের বাসিন্দারা জোয়ার-ভাটার পানি ব্যবহার করে দৈনন্দিন কাজ সারতে পারছে। বিকেলে মানুষ খালপাড়ের ওয়াকওয়েতে চলাফেরা করে বিনোদনের সুবিদা নিচ্ছে। জাতির জনকের জন্মভুমি গোপালগঞ্জের মানুষের জন্য এই কাজটি করতে পেরে আমি গর্বিত। খালটির সৌন্ধর্য ধরে রাখার জন্য তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়রকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই খালটিকে ঘিরে শহরের মানুষের দীর্ঘদিনের আশার প্রতিফলন হলো। দীর্ধ প্রায় অর্ধশত বছর আগে এই খালটি সচল ছিল। এখানকার পানিতে গোছল করাসহ স্থানীয় জনগন নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতো এই খালের পারি। কিন্তু প্রায় দুই দশক ধরে এই খালটি হাজা-মজা হয়ে ময়লা আর্বজনার স্তুপে পরিনত হয়। শহরের সমস্ত ময়লা পানি এই খালে এসে পড়ে দূগন্ধ ছড়াতো। এখন এতোবছর পরে একটি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ায় খালটি প্রান ফিরে পেয়েছে।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, ফয়জুর রহমান বলেন, রাস্তা কেটে ব্রীজ নির্মাণ, ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য খাল সংস্কার করা হয়েছে। এই কর্মযজ্ঞে সহযোগীতা করেছেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা ও গোপালগঞ্জ পৌরসভা মেয়র কাজী লিয়াকত আলী। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সকল কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। এখন রক্ষনাবেশণ ঠিকমতো করলে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
দীর্ঘ বছর পর উন্মুক্ত হওয়া এই খালটি যেন পুনরায় অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্মের শিকার না হয়, ময়লার ভাগাড়ে পরিনত না হয় সেদিকে পৌর-কর্তৃপক্ষের নজরদারীর দাবী স্থানীয়দের।