স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেজি স্কুল খুলে দেয়ার দাবি শিক্ষকদের

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২১, ০৫:১৯ পিএম স্বাস্থ্যবিধি মেনে  কেজি স্কুল খুলে দেয়ার দাবি শিক্ষকদের
ফাইল ছবি

আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী

দেড় বছরের অধিক সময় ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে নোয়াখালীর প্রায় পাঁচ শতাধিক কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুল বন্ধ রয়েছে। মাসের পর মাস এসব স্কুল বন্ধ থাকায় আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।
 
এভাবে বন্ধ অবস্থায় চলতে থাকলে দেশের অধিকাংশ কেজি স্কুল বন্ধ হওয়ার আশংকা করছেন কেজি স্কুল নিয়ে গঠিত এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।

অন্যদিকে, স্কুলের ভাড়া দিতে না পারায় অনেক স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে ভবন মালিক। দেশে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি হওয়ায় গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে কেজি স্কুলের শিক্ষক ও নেতৃবৃন্দ স্কুল খোলার জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের দাবি, দেড় বছরের অধিক সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কেজি স্কুলের শিক্ষকদের দুর্দিন চলছে। আবার অনেকেই পরিবার নিয়ে পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে।

নোয়াখালীর ৯ উপজেলায় কমপক্ষে ২ সহস্রাধিক শিক্ষক রয়েছেন। এসব শিক্ষকদের মধ্যে প্রায় সবাই বেকার দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া, জীবিকার তাগিদে পেশা পরিবর্তন করেছেন অনেকেই।

জানতে চাইলে কিন্ডারগার্টেনের নোয়াখালীর এক শিক্ষক বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে। আর যে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী রয়েছে, এই ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ও বেতন দিচ্ছেনা। ফলে আমরা না পারছি স্কুল ভাড়া দিতে, না পারছি শিক্ষকদের বেতন দিতে। এরপরও স্কুল চালাতে গিয়ে অনেক স্কুল মালিক এবং শিক্ষকের গলায় গলায় ঋণ হয়েছে। তাই সরকারের কাছে আমাদের সবার একটাই দাবি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিন।

তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে অনেক স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। আর অনেকগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। কেজি স্কুলের শিক্ষকদের সহায়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বছর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেজি স্কুলের শিক্ষকদের সামান্য কিছু সহায়তা প্রদান করা হয়। তবে তাও অধিকাংশ স্কুলের কপালে জুটেনি।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের নোয়াখালীর অন্য এক নেতা বলেন, আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় কেজি স্কুলের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে। দেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসন সংখ্যার তুলনায় শিক্ষার্থী অনেক বেশি। ফলে অনেক অভিভাবক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্তানদের পড়াতে চান না। এছাড়া, কেজি স্কুলের পড়ার মানও অনেক ভালো।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের নোয়াখালীর আরেক নেতা বলেন, কেজি স্কুলের শিক্ষকদের দুর্দিন চলছে। কেজি স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষক বেকার হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে অনেকে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় যোগ দিয়েছেন। যা একটা জাতির জন্য খুবই দুঃখজনক। 

তিনি আরো জানান, একদিকে স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন বেতন পাচ্ছি না। অন্যদিকে, প্রতিমাসে স্কুল ভাড়ার জন্য মালিক পক্ষ চাপ দিচ্ছেন। চাপ সইতে না পেরে অনেকে হল ছেড়ে দিচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে ধীরেধীরে দেশের সব কেজি স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। 

তাই সরকারের কাছে এসোসিয়েশন এবং শিক্ষকদের দাবি স্বাস্থ্যবিধির মেনে চলার শর্তে এসব স্কুল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তÍ দেয়া হোক। অন্যথায় এসব স্কুল বন্ধ হওয়া ছাড়া আর কোন পথ থাকবেনা। যাতে বেকার হয়ে পড়বে লাখ লাখ শিক্ষকের কর্মজীবন।