টাঙ্গাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে (পিটিসি) প্রশিক্ষণে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পুলিশের ২১৩ পিএসআইকে ডিসি কোর্স থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে- ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অমান্য করে তিন দিন অনুপস্থিত থাকার অপরাধে ওই পিএসআইদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, এই অব্যাহতি পাওয়া পিএসআই (নিরস্ত্র)গণ ১৯ তম ডিসি কোর্স হতে অব্যাহতি প্রদানসহ শিক্ষানবিশ বাতিল করার পর উক্ত প্রার্থী পরবর্তীতে অনুষ্ঠিতব্য কোনও ডিসি কোর্সে মনোনিত হলেও আলোচ্য ডিসি কোর্সের ইতোমধ্যে সম্পন্নকৃত সময়কাল কোনভাবেই সমন্বয় করার সুযোগ থাকবে না বলেও পুলিশ হেড কোয়াটারের চিঠিতে বলা হয়। ২০২১ সালের ২৭ মে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল পিটিসিতে এসআইদের (নিরস্ত্র) ১৯তম ডিসি কোর্সে ৮৭৭জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেন। পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পেতে উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণটি আবশ্যক। ১৯তম কোর্সটি শুরু হয় ২০২০ সালের ১৫ জুন। প্রথম ছয় মাস তাদের নিজ নিজ ইউনিটে বাস্তব প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। পরবর্তী ছয় মাস টাঙ্গাইল পিটিসিতে শারীরিক প্রশিক্ষণে যোগ দেন তারা। ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিটিসিতে তাদের কোর্স শুরু হয়। এই প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ গত ১৫ জুন শেষ হওয়ার কথা ছিল। গত ১৩ থেকে ১৫ মে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ওই কর্মকর্তাদের পিটিসিতেই অবস্থান করতে বলা হয়। সেই নির্দেশনা অমান্য করে এবং অনুমতি না নিয়ে ২১২ জন বাড়িতে চলে যান।
এর কিছু দিন আগেও আরেকজন এ নির্দেশনা অমান্য করেন। সব মিলিয়ে ২১৩ জনের বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করেন পিটিসি কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে টাঙ্গাইল পিটিসির কমান্ড্যান্ট ময়নুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ১৩ মে বিকাল ৫টা থেকে ১৫ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন ২১২ জন প্রশিক্ষণার্থী। এরপর বিভাগীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ করায় অভিযুক্তদের ডিসি কোর্স থেকে পুলিশ সদর দফতরের এক চিঠির মাধ্যমে তাদের অব্যাহতির নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে তারা পিটিসি ত্যাগ করার সুযোগ পাওয়ায় সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা চিঠিতে বলা হয়।
এদিকে অব্যাহতি পাওয়া পিএসআইদের দাবি- ঈদের দিন দুপুরের দিকে কর্তৃপক্ষ তাদের জানায়, ঈদ উপলক্ষে এদিন রাতে তাদের রোলকল হবে না। এ ছাড়া এদিন সকালে ও বিকালেও রোলকল হয়নি। পরে কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়ে পিটিসির বাইরে যান তারা। একপর্যায়ে সহকর্মীদের কাছে শুনতে পান রাতে রোলকল হয়েছে। ওই রাতেই পিটিসিতে ফেরত যান তারা। তখন তাদের জানানো হয়, পর দিন সকাল থেকে প্রশক্ষণে যোগ দিতে। কিন্তু দুদিন প্রশিক্ষণ করার পর জানানো হয় তাদের কোর্স বাতিল করা হয়েছে।
তারা আরও জানান, পিটিসিতে প্রতিদিন তিনবার রোলকল করা হয়। তারা শুধু ঈদের দিন রাতের রোলকলে অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেটিকে তিন দিনে পাঁচবার অনুপস্থিত দেখিয়ে সদর দফতরে চিঠি পাঠায়। তারা বিষয়টিকে মানবিকভাবে বিবেচনার জন্য আইজিপির কাছে আবেদন জানান।
টাঙ্গাইল পিটিসি কমান্ড্যান্টের পক্ষে পুলিশ সুপার সালমা সৈয়দ পলি তিন দিনের মর্নিং রিপোর্ট সদর দফতরে পাঠান। তাতে দেখা যায়, ১৩ থেকে ১৫ মে তিন দিন প্রশিক্ষণে ৮৫৬ জন এসআই উপস্থিত ছিলেন, আর অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত ছিলেন ১১ জন। এ ছাড়াও টাঙ্গাইল পিটিসির এসআই (ফোর্স) হাবিবুর রহমান খান এক রিপোর্টে উল্লেখ করেন, ২১২ জন প্রশিক্ষণার্থী শুধু ১৪ মে রাতের রোলকলে অনুপস্থিত ছিলেন।
টাঙ্গাইল পিটিসির পুলিশ সুপার (এসপি) সালমা সৈয়দ পলি’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।
টাঙ্গাইল পিটিসির কমান্ড্যান্ট ডিআইজি ময়নুল ইসলাম জানান ‘করোনা সংক্রমণের কারণে বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সবাইকে কর্মস্থলে ঈদ করার জন্য নির্দেশনা ছিল। এখানে শৃঙ্খলা কড়াকড়িভাবে দেখা হয়। গণহারে চলে যাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’