রাঙ্গাবালী(পটুয়াখালী) সংবাদদাতা
দ্রুতই বিদ্যুৎতের আলো জ্বলবে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায়। সেই প্রতিক্ষায় রয়েছে উপজেলাবাসী। কিন্তু সদর ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুতের কাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, রাঙ্গাবালী ইউনিয়নে একটি সিন্ডিকেট ওয়্যারিংকাজে বাঁধা সৃষ্টি করছে। ওই সিন্ডিকেট নিজেরাই সার্টিফিকেটবিহীন লোকজন দিয়ে ওয়্যারিং করাতে মিটার স্থাপনেও বাগড়া দিচ্ছেন। ফলে সংযোগ পেতে বিড়ম্বনায় থাকা সুবিধা প্রত্যাশীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় লোকজন ও পল্লী বিদ্যুৎ সূত্রে জানা গেছে, সিন্ডিকেটের দীর্ঘদিনের বাঁধা বিপত্তির পর রোববার সকাল সাড়ে ৯ টায় বিদ্যুৎ সংযোগ ও মিটার স্থাপনের জন্য রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের বাহেরচর বাজারের মন্দির রোডের সামনে ব্যানার লাগিয়ে কার্যক্রম শুরু করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আলোর ফেরিওয়ালা টিম। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয়ে কয়েকজন এসে তাদের কার্যক্রমে বাঁধা দিয়ে হুমকি ধামকি দেয়। তাৎক্ষণিক কার্যক্রম বন্ধ করে ব্যানার ও সরঞ্জাম গুটিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন।
পল্লী বিদ্যুতের লোকজন বলছেন, নিয়মানুযায়ী সার্টিফিকেটধারী টেকনিশিয়ান দিয়ে গ্রাহক নিজ অর্থে ওয়্যারিং করাবে। ওয়্যারিংয়ের মজুরি এবং মালামাল গ্রাহকের। ওয়্যারিং সম্পন্ন হলে মিটার স্থাপন করে দিবে পল্লী বিদ্যুৎ। আবাসিকের জন্য ৪৫০ টাকা এবং বাণিজ্যিকের সরকারি ফি ৮৫০ টাকা। কিন্তু সুবিধাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, ওয়্যারিংয়ে গ্রাহকের স্বাধীনতা নেই। স্থানীয় সিন্ডিকেটের নির্ধারিত লোক দিয়েই ওয়্যারিং করাতে হয়। তাদের ফি এক হাজার টাকা। কিন্তু বেশিরভাগ অদক্ষ এবং সার্টিফিকেটবিহীন। অথচ পল্লী বিদ্যুতের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সার্টিফিকেটধারী টেকনিশিয়ানদের মাধ্যমে ওয়্যারিং করাতে সর্বোচ্চ ছয় শত টাকা হলেই হয়।
রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের বাহেরচর বাজারের কম্পিউটার ব্যবসায়ী এম সোহেল বলেন, গ্রাহকের যাকে ভাল লাগে, যিনি অভিজ্ঞ সার্টিফিকেটধারী তাকেই দিয়েই কাজ করাবে। অদক্ষ সার্টিফিকেটবিহীন লোক দিয়ে কাজ করালে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এখানে হচ্ছেটা কি? সব জায়গায় বাণিজ্য করা ঠিক না। এ উপজেলায় ওয়্যারিং করতে আসা কয়েকজন সার্টিফিকেটধারী টেকনিশিয়ানের অভিযোগ, গোপনে দুই-একটা ওয়্যারিং করলেও সিন্ডিকেটের হুমকি-ধামকিতে কেউ কাজ করতে সাহস পাচ্ছে না। তাই সংযোগ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে গ্রাহকরা।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে পল্লী বিদ্যুতের এক কর্মচারী বলেন, সকালে আমরা বসছিলাম আলোর ফেরিওয়ালা টিম। আমরা কাজ কেবল শুরু করছি। তখনই ছাত্রলীগের ছেলেপেলে এসে বলে চেয়ারম্যান (রাঙ্গাবালী ইউপি) মহোদয় আপনাদেরকে ডাকে। আইসাই হুমকি ধামকি দিছে। পরে চেয়ারম্যান মামুন খানের বাসায় নিয়া গেছে। চেয়ারম্যান বলেন আপনি এখানে কাজ করতেছেন কিজন্য? আপনারা রেট কমালেন কেন? আপনাদের এত বার বলা সত্ত্বেও এ এলাকায় যদি ঢোকেন ছাত্রলীগের ছেলে পেলে মারধর করে তাহলে কিভাবে ঠেকাবেন আপনারা।
চেয়ারম্যান বলে, আমি সমস্ত উপজেলার কাজই করাতে চেয়েছিলাম। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে কথা হয়েছিল পুরোটা না, আমি রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের কাজ করাবো। চেয়ারম্যান এ কথা বলার পরে আমরা (পল্লী বিদ্যুতের লোকজন) এখানে কাজ করবো না বলে বড়ইতলা বাজারে (ছোটবাইশদিয়া) চলে আসছি। তারা চাইতেছে যে কাজগুলো ওইখানে না করা হয়। তারা তাদের লোক দিয়ে করাবে। রাঙ্গাবালী ইউনিয়নে আমরা কাজ করবো না।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (গলাচিপা-রাঙ্গাবালী) প্রকৌশলী মাইনউদ্দীন বলেন, আলোর ফেরিওয়ালা টিমকে বাঁধা দেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। আমাকে ওভার টেলিফোনে জানানোর কারণেই আমি এসেছি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে আমরা দেখবো। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, রাঙ্গাবালী উপজেলার মধ্যে রাঙ্গাবালী ইউনিয়নে মিটার স্থাপন কার্যক্রম কম। উপজেলায় মোট ৭০০ মিটার লাগিয়েছি। এরমধ্যে রাঙ্গাবালী ইউনিয়নে ২৫-৩০টি মিটার লাগিয়েছি। এর বেশি সম্ভব হয়নি। এটা দেখি, কি কারণে ঘটনাগুলো ঘটছে। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নিব আমরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী রাঙ্গাবালীর বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এজন্য দ্রুত সকল কাজ শেষ করা প্রয়োজন। এ কাজে যারা ঝামেলা করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
জাগরণ/এমআর