সাকলাইন যোবায়ের, কুমিল্লা
জাফরান শীত প্রধান অঞ্চলের ফসল কিন্তু বিশেষ ব্যাবস্থাপনায় বাংলাদেশে চাষাবাদ হচ্ছে। খাবারে জাফরান ব্যবহার করলে, সেই খাবারের স্বাদ এবং রং অনেক বেড়ে যায়। কেশর বা জাফরান শুধুমাত্র খাবারের স্বাদ এবং রং-ই বাড়ায় না। এর আরও অনেক গুণাগুণ রয়েছে। জাফরানে ঘণ কমলা রঙের জলে মিশে যায় এমন একধরণের ক্যারোটিন থাকে, যাকে ক্রোসিন বলা হয়।
এই ক্রোসিনের জন্যই খাবারে জাফরান ব্যবহার করলে একটা উজ্জ্বল সোনালি রং হয় খাবারে। এই ক্রোসিন আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরণের ক্যানসার কোষ, যেমন লিউকেমিয়া, ওভারিয়ান কারসিনোমা, কোলন অ্যাডেনোকারসিনোমা প্রভৃতি ধ্বংস করতেও সাহায্য করে। সম্প্রতি গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, জাফরান স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে জাপানে পারকিনসন এবং স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন অসুখে জাফরান ব্যবহার করা হয়।
গবেষণায় জানাযায়, জাফরান স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধে এক চিমটে জাফরান মিশিয়ে খেলে আপনার ভাইটালিটি বাড়বে। ঠান্ডা লাগা, জ্বরের হাত থেকে বাঁচায় জাফরান।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কুমিল্লার কৃতি সন্তান আফম জামাল উদ্দিন। বাংলাদেশ গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চল হওয়ায় জাফরানের চাষাবাদ আমাদের দেশে সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমানে দেশের আবহাওয়ায় জাফরান চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন এই শিক্ষক।
জানা যায়, আলো-আদ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত কক্ষে জাফরানের ফুল ফোটাতে সক্ষম হয়েছেন গবেষক । আমাদের দেশের উন্মুক্ত পরিবেশে জাফরানের চাষ বেশ ব্যয়বহুল। সে কারণে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত কক্ষে উৎপাদন করা হয়েছে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে আবহাওয়াজনিত কারণে ফসল মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আর বছরে একাধিক বার ফলন ওঠানো যাবে।
কুমিল্লার কৃতি সন্তান শেকৃবি) এর অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে বাংলাদেশে জাফরান উৎপাদন করা সম্ভব না। কিন্তু আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি অ্যারোপনিক্স পদ্ধতিতে (বাতাসের মাধ্যমে গাছের খাদ্য উপাদান সরবরাহ) একটা ছোট আকারের ঘরের মধ্যেই এক হেক্টর সমপরিমাণ জায়গার জাফরান উৎপাদন করা সম্ভব। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া সাপেক্ষে বাংলাদেশেই এর লাভজনক বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
এই গবেষক জানান, গত বছর জাপান থেকে জাফরানের পাঁচ শতাধিক করম আনান তিনি। প্রথমে সেগুলো ফ্রিজে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে রোপণের উপযোগী করা হয়। পরে তা ঘরের মধ্যে প্লাস্টিক ও টিনের তৈরি ট্রেতে রোপণ করা হয়। দেখা যায়, প্রায় সবগুলো গাছেই ফুল এসেছে। বাংলাদেশে আমরা যতটুকু সফলতা অর্জন করেছি, তাতে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখন বাণিজ্যিক উৎপাদনেও যাওয়া যাবে বলেও তিনি জানান।
আ ফ ম জামালউদ্দিন (মাসুম) এর পিতা মরহুম আকরাম আলী চট্টগ্রাম বিভাগীয় কৃষির উপ পরিচালক ছিলেন। আ ফ ম জামালউদ্দিন ৭ ভাইয়ের মধ্যে ৬ষ্ঠ। সবার ছোট ভাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’র একাস্ত সচিব। সবার বড় ভাই বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। বাকী ভাইয়েরা ব্যবসায়ী। তিনি কুমিল্লা নগরীর দক্ষিণ বাগিচাগাঁও এলাকার রায়তলা সরকার বাড়ির বাসিন্দা। তিনি কুমিল্লা জিলা স্কুল,
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তারপর জাপানে ২ বার পিএইচডি এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কাগোসিমা, জিফু ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা করেন। তারপর ২০০৪ সাল থেকে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যান তত্ব বিভাগে অধ্যাপনা এবং গবেষণা করে আসছেন। তার স্ত্রী উনার সাথে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরবর্তীতে জাপানে পিএইচডি করেন।