দুর্ভোগে গাইবান্ধার বানভাসিরা

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১, ০৪:৫৫ পিএম দুর্ভোগে গাইবান্ধার বানভাসিরা

মাসুম লুমেন, গাইবান্ধা

তিস্তা ও ব্রম্মপুত্রের অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পরেছে গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারি ও কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি চরসহ সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা এই চার উপজেলার ২৯ ইউনিয়নের ১২০ গ্রামের ২৪ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ। সেইসাথে দেখা দিয়েছে, বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট। প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় চরম বিপদে পড়েছেন অসুস্থ রোগী ও শিশুরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বারবার নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা এসব মানুষ ঘরবাড়ি সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। শেষ পর্যন্ত ঘর করার শুকনো মাটি খুঁজে পেলেও বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও পয়নিষ্কাসনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে এসব অঞ্চলে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পর্যাপ্ত সহযোগিতা না থাকায় দিশেহারা হয়ে পরেছে নদী ভাঙ্গনের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পরেছে। শুকনো মাটি না থাকায় কেউ কেউ নিজেদের বাড়ির ঘরে বাহিরে চকি উঁচু করে গরু-ছাগলসহ সেখানেই আশ্রয় নিয়েছেন। আর রান্নার জন্য হাড়ি পাতিল মাথায় নিয়ে ছুটতে হচ্ছে উঁচু স্থানের সন্ধানে। রান্নার শুকনো খড়ি, বিশুদ্ধ পানি, থাকার নিরাপদ আশ্রয়, পয়ঃনিষ্কাশনসহ নানা দুর্ভোগে দিন কাটছে বানভাসি পরিবার গুলোর।

তাদের অভিযোগ, বন্যা এলে মাঝে মাঝে সামান্য কিছু খাবার দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাছাড়া শুধু চাল দিয়ে আমরা কি করবো। রান্নার জন্য শুকনো খড়ি, চুলা সব পানির নিচে। বারবার বান আসে, বারবার বসতভিটা নদীর ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেছে। আমরা ত্রাণ চাইনা, আমরা স্থায়ীভাবে নদী ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকে জোর অনুরোধ করছি।

গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায় প্রতিবছর সহস্রাধিক পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্ধী হয়ে পরেন। এরমধ্যে অধিকাংশ মানুষ দিনমজুর শ্রেণীর। করোনা এবং বন্যায় কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে চরাঞ্চলের ভাগ্যহত এসব মানুষ।

কামারজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির জানান, ইউনিয়নের খারজানি চরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের অধিকাংশই বিলীনের পথে। জেলা প্রশাসন থেকে বন্যা কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছে। সেসময় ২০ কেজি করে চাল ও নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটাই যথেষ্ট নয়,তারা স্থায়ীভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ চায়। এজন্য জেলা প্রশাসক চর উন্নয়ন বোর্ড গঠনের কথা বলেছেন। সেটা হলে শতশত পরিবার বসতভিটা ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী জাগরণকে বলেন, এবার জেলায় এ পর্যন্ত ৮০ হাজার মেট্রিকটন চাল ও ২লাখ নগদ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত  খাদ্যসামগ্রী মজুদ আছে বলেও তিনি জানান।

এরই মধ্যে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলম। তিনি জাগরণকে বলেন, ইতোমধ্যে ওইসব এলাকায় ত্রাণ সহায়তা ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।

বন্যা দুর্গতদের জন্য ২৪ ঘন্টাই প্রস্তুত রয়েছেন বলে জাগরণকে জানান জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মতিন। তিনি জানান, চর অঞ্চলের মানুষের জন্য দরকার চর উন্নয়ন বোর্ড। এটা করা গেলে চরাঞ্চলের মানুষ যেমন তাদের বসতভিটা রক্ষা করতে পারবে, তেমনি রক্ষা করা যাবে সেখানকার আবাদি জমি।