কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে নদী তীরবর্তী কুষ্টিয়া- ঈশ্বরদী মহাসড়ক। পদ্মা নদীর গতিপথ বদলে মিরপুরের তালবাড়িয়ার দিকে চলে আসছে। মহাসড়ক থেকে প্রায় ৭০ মিটার দূরে অবস্থান করছে পদ্মা নদীর ভাঙন।
সড়কটি বিলীন হলে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। পাশাপাশি বন্যা কবলিত হবে কুষ্টিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। আর তাই আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় নদী তীরবর্তী এলাকাবাসী। ভাঙন প্রতিরোধে পাউবো ৯৯০কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করলেও তা আটকে আছে। ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে সেখানে দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে গত সোমবার সেখনে সাংবাদ সম্মেলন করেছে তারা।
মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফীন বলেন, কয়েক বছর ধরে এলাকায় পদ্মায় ভাঙন চলছে। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৯৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করলেও তা আটকে আছে। এ বছর পদ্মায় যেভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে,তাতে দ্রুত প্রতিরোধ না করা গেলে কুষ্টিয়া- ঈশ্বরদী মহাসড়ক নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।এতে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।পাশাপাশি কুষ্টিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যা কবলিত হবে।
স্থানীয় তালবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান বলেন, ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এখনই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না করা গেলে মহাসড়কসহ এলাকার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়,নদীর গতিপথ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। পদ্মা নদী মাঝপথ থেকে গতি পরিবর্তন করে তালবাড়িয়া এলাকার দিকে ধেয়ে আসছে। এছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীর রুপপুরে নদী শাসনের কারণে নদীর গতিপথ বদলে মিরপুরের তালবাড়িয়ার দিকেও চলে আসছে। এখানেও স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। প্রতি বছর ভাঙন এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে পারে না।
তালবাড়িয়া পশ্চিম রানাখড়িয়া এলাকার বাসিন্দা খয়ের সরদার বলেন, জায়গা জমি সব নদী খাইলো। দূরে যে পানি থইথই দেখছেন,সেখানেও ১৬ বিঘা আবাদি জমি ছিল। ছিল বাঁশের ঝাড়। কয়েক বছরে সব ভেঙে নদীতে চলে গেছে এবং যাচ্ছে। বসত বাড়িটি গেলে আমার যাবার মত আর কোথাও জায়গা নাই।
নানাখড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা তুজাম মন্ডল বলেন, গাঙ দূরে ছিল, ভাঙতে ভাঙতে খালি চলেই আসছে। বহু বাড়িঘর আগেও ভেঙে গেছে,এখনো ভেঙে যাচ্ছে।
আলী হোসেন বলেন, আমার বাপের একখান ৫০ হাত লম্বা পাকা ঘর ছিল। এই বছর কয়েক দিন আগে তা ভেঙে গেছে। বালু বস্তা ফেলছে কিন্তু তাতেও প্রতিরোধ হচ্ছে না। সব ভেঙে ভেঙে চলে যাচ্ছে। বস্তা আরো লাগবে।
পাউবো সূত্র বলছে, তালবাড়িয়া ইউনিয়নে সাত কিলোমিটার এলাকায় পদ্মায় ভাঙন রয়েছে। ২০১৬ সালের দিকে সেখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ৬০০কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়। সব শেষ সেটি ৯৯০ কোটি টাকার প্রকল্পে দাঁড়াই। কিন্তু প্রকল্পটি অনুমোদন হয়নি। যে কারণে বাধ নির্মাণ করা যাচ্ছে না ।
কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন বলেন, তালবাড়িয়া পয়েন্টে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে সাত কিলোমিটার এলাকা। সেখানে খুব কাছেই কুষ্টিয়া- ঈশ্বরদী জাতীয় মহাসড়কও হুমকিতে পড়তে পারে।বর্তমানে এই সড়কের একটি অংশের অবস্থান পদ্মা নদী থেকে মাত্র ৭০ মিটার দূরে।
জাগরণ/এমআর