এক বিদ্যালয়ের ৮৫ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১, ০৫:৩১ পিএম এক বিদ্যালয়ের ৮৫ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে

দেড় বছরে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৫ শিক্ষার্থী। এতে হতাশা ব্যক্ত করেছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। দরিদ্রতা, কুসংস্কারসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এ উপজেলায় বাল্যবিয়ের হার দিনের পর দিন বেড়েই চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহা. মতিউর রহমান খন্দকার বলেন, বিদ্যালয়ে ৩৪৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। এর মধ্যে ৮৫ জনের বিয়ে হয়ে গেছে। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির দুইজন, সপ্তম শ্রেণির ১১ জন, অষ্টম শ্রেণির ১৭ জন, নবম শ্রেণির ২৮ জন, দশম শ্রেণির ১৪ জন ও চলতি বছরের ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আগে এ বিদ্যালয়ে প্রতিদিন গড়ে ৭০-৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হলেও এখন ৪০-৫০ শতাংশ উপস্থিত হয়।

নূপুর, আশামনি, নাছিমা ও আতিকা খাতুনসহ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলার প্রথমদিনই ১৭ সহপাঠীর বিয়ের খবর শুনে মন খারাপ হয়ে যায়।

একই প্রতিষ্ঠানের সুমী আক্তার নামের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জানায়, দীর্ঘদিন পর স্কুলে এসে জানলাম আমাদের ২৮ সহপাঠীর বিয়ে হয়ে গেছে। পুরো স্কুলের ৮৫-৯০ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

বাল্যবিয়ের শিকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বাবলু মিয়া জানান, সাইকেল ঠিক করে যা পাই তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। করোনায় কষ্ট বেড়ে যায়। কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি। দেখতে দেখতে মেয়েটাও বড় হয়ে গেল। ভালো পাত্র পাওয়ায় আর দেড়ি করি নাই। মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি।

উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. খয়বর আলী জানান, করোনায় ইউনিয়নে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। আমরা এজন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। পাড়া-মহল্লায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মতবিনিময়সহ সচেতনমূলক প্রচার চালানো হবে।

ফুলবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই জানান, বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাল্যবিয়ের তথ্যটি পেয়েছি। এ উপজেলায় ৭৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। বাল্যবিয়ের প্রতিরোধে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন দাস জানান, ওই বিদ্যালয়ের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের বিষয়টি শুনেছি। বাল্যবিয়ে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরণে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে আমরা কাছ শুরু করেছ।


জাগরণ/এমইউ