জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা ছিলেন ফিলিপাইন নাগরিক। দেশটির একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিশারিজ বিভাগে গ্র্যাজুয়েশন করেন। লেখাপড়া শেষে চাকরির উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান সিঙ্গাপুর। সেখানেই পরিচয় হয় বাংলাদেশি তরুণ জুলহাস উদ্দিনের সঙ্গে। এরপর প্রেম-বিয়ে।
শুধু তাই নয়, প্রেমের টানে ১০ বছর আগে ছুটে আসেন বাংলাদেশে। সংসার পাতেন প্রেমিক জুলহাসের অজপাড়া গাঁ ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নে। এখানেই কাটছে তাদের সুখের দাম্পত্য জীবন। তবে এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চমক দেখালেন ফিলিপাইন কন্যা জীন ক্যাটামিন। হয়েছেন জনপ্রতিনিধি।
দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনে সদস্য পদে নির্বাচিত হন জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা। ১১ নভেম্বর নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর জেলাজুড়ে বেশ চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা জানান, ২০০৮ সালে ফিলিপাইনের Mindanao State University থেকে তিনি ফিশারিজ বিভাগে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরপর চাকরিতে যোগ দেন সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানিতে। সেখানেই চাকরি করতেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার যুবক জুলহাস।
তিনি আরো জানান, সে সময় জুলহাসের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। বছর দুয়েক পর নিজেদের দেশে ফেরেন তারা। তবে তাদের মধ্যে চলতে থাকে যোগাযোগ। সিদ্ধান্ত নেন বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। সে জন্য ২০১০ সালের শেষের দিকে জুলহাস পাড়ি জমান ফিলিপাইনে। সেখানে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পেট্রিয়াকা স্বামীর হাত ধরে চলে আসেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায়।
জীন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা বলেন, ১০ বছর হয়ে গেছে আমি এখানে এসেছি। বাবা-মা ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়েছে। শুরুতে বেশ বিপাকে ছিলাম। কারণ আমি বাংলা বলতে পারতাম না। আর এখানকার মানুষ ইংরেজি বোঝে না। তবে আস্তে আস্তে শেখার চেষ্টা করেছি। এখন আমি সবার কথাই মোটামুটি বুঝি। আমিও কিছু কিছু বলতে পারি।
নির্বাচন করার কোনো পরিকল্পনা কখনো ছিল না জানিয়ে এ নারী বলেন, আমি নির্বাচনে দাঁড়াতে চাইনি, ইচ্ছাও ছিল না। কিন্তু এলাকার মানুষ জোর করে বলেছে নির্বাচন করতে। তারা আমাকে খুব ভালোবাসে, তাই তাদের কথা রাখতেই আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। প্রার্থী হওয়ার পর অনেক কষ্ট করেছি। সকালে নাস্তা খেয়ে প্রচারণায় বের হয়ে সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় বাড়িতে এসেছি। কিন্তু জয় পাওয়ার সব কষ্ট ঘুচে গেছে।
একটা সময় জুলহাস মন জয় করেছিলেন ফিলিপাইন তরুণী পেট্রিয়াকার। সে কারণেই তো সব ছেড়ে তিনি পেট্রিয়াকা থেকে পরিণত হয়েছেন জেসমিন আক্তারে। তিনি রাজনীতি বোঝেন না, নন বাঙালিও তবে ঠিকই জয় করেছেন এলাকাবাসীর মন। তাইতো এর প্রতিদান ব্যালটেই দিয়েছেন তারা।
মাইক প্রতীক নিয়ে নবনির্বাচিত এ ইউপি সদস্য পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ১ হাজার ৮৩৭ ভোট। আর মানুষের কাছ থেকে পাওয়া এমন ভালোবাসায় আপ্লুত একসময়ের ভিনদেশি এ নারী। খুশি তার স্বামী জুলহাসও।
জুলহাস উদ্দিন বলেন, আমার মনের পাশাপাশি আমার স্ত্রী এলাকাবাসীর মনও জয় করতে পেরেছে। তাদের জন্যই নির্বাচন করেছে এবং তারাই জয়লাভ করিয়েছে। আমার আশা সবার সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে থেকে মানুষের উপকার করে যাবে পেট্রিয়াকা।
ফুলবাড়ীয়া উপজেরার রাধাকানাই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনে এলাকার পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় খুশি সবাই। বাড়িতে এসে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি করেছেন আনন্দ মিছিলও।
সুফিয়া খাতুন নামে এক প্রতিবেশী বলেন, তিনি নিজের দেশ, পরিবার ছেড়ে এখানে এসে আমাদের আপন করে নিয়েছেন। আমরাও তাকে অনেক পছন্দ করি। সেজন্যই তাকে আমরা ভোট দিয়ে পাস করিয়েছি। তিনি এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন।
জাগরণ/এমইউ