খুলনা জেনারেল (সদর) হাসপাতালে ‘ব্লাড ব্যাংক’ এর এফডিআরের ৭০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উধাও হয়ে গেছে। অগ্রণী ব্যাংক, স্যার ইকবাল রোড শাখায় ওই টাকাগুলো এফডিআর করা হয়েছিলো।
পরবর্তীতে ওই টাকা ব্যাংকের ওই হিসেবে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় খুলনা সিভিল সার্জনের নির্দেশে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে করোনা পরীক্ষার দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ল্যাবের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সময়ে তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শনানোর নোটিশ জারি করা হয়। অন্যদিকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাস ৩ সপ্তাহের হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন।
খুলনা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকে এফডিআর এর ৭০ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখা ছিলো। কিন্তু সেই টাকা বর্তমানে ব্যাংকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ৩ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালের জুনিয়ার কনসালটেন্ট (ইএনটি) ডা. কাজী আবু রাশেদকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। ডা. কাজী আবু রাশেদ বর্তমানে ব্লাড ট্রান্সফিউশন অফিসার (বি টু ও) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
সিভিল সার্জন বলেন, করোনা পরীক্ষার দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ল্যাবের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত ২১ নভেম্বর ডিজি থেকে তাকে বরখাস্ত করেন। একই সময়ে তার বিরুদ্ধে কেনো বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে না সে জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। অভিযুক্ত প্রকাশকে নোটিশের জবাব ১০ দিনের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। এই আদেশের পত্রটি প্রকাশের বাড়ির ঠিকানায় প্রেরণ করা হয়েছে।
ব্লাড ব্যাংকের ৭০ লাখ টাকা এফডিআর করা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে না পাওয়ার বিষয়ে ঘটনা জানতে চাইলে জেনারেল হাসপাতালে জুনিয়ার কনসালটেন্ট (ইএনটি) ডা. কাজী আবু রাশেদ বলেন, এ বিষয়ে এখনো তদন্ত চলমান রয়েছে। আমরা তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্ত শেষ না হলে এ বিষয় নিয়ে কিছু বলতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রাজ্জাক ও আরএমও ডা. মাহবুবুর রহমান এর আমলেই ব্লাড ব্যাংকের এফডিআর এর ৭০ লাখ টাকা উত্তোলন হয়েছিলো। এতো বছর বিষয়টি কারো নজরে আসেনি। এই এফডিআর টাকাগুলো অগ্রণী ব্যাংকে রাখা হয়েছিলো। ব্যাংক থেকে এই টাকা সিভিল সার্জন এবং ব্লাড ট্রান্সমিউশন অফিসার (বি টু ও ) এর যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া কেউ তুলতে পারেন না। করোনা পরীক্ষার দুই কোটি ৫৭ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তদন্ত করা শুরু করলে তখন ব্লাড ব্যাংকের ৭০ লাখ টাকা এফডিআর অগ্রণী ব্যাংকে না থাকার বিষয়টিও ধরা পড়ে।
হাসপাতালের একাধিক সূত্রমতে, প্রকাশের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা দায়েরের পর হাসপাতালে অনেকেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। কারণ ওই করোনার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অনেক রাঘব-বোয়ালরা জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া একটা বিষয়ে দুর্নীতি খুঁজতে গিয়ে হাসপাতালের অনেক দুর্নীতির ঘটনাও উম্মোচন হবে।
অভিযুক্ত ল্যাবের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাস জানান, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুদকের মামলায় তিনি হাইকোর্ট আগাম ৩ সপ্তারের জন্য জামিন পেয়েছেন। গত ২৯ নভেম্বর তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। আগামী ২১ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ প্রদান করেন।
তিনি বলেন, আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে সেই চিঠি পেয়েছি এবং কারণ দর্শানর চিঠির জবাব আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছি। কাল-পরশু তিনি সিভিল সার্জন দফতরের যাবেন।
দুদকের মামলার বিষয়ে প্রকাশ বলেন, আমার নামে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুদকে মামলা হয়েছে। এখন এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে চাচ্ছি না। দুদকই তদন্ত করে বের করবে এর সঙ্গে কারা জড়িত রয়েছে।
এর আগে করোনা পরীক্ষার দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ল্যাবের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রকাশ কুমার দাসের বিরুদ্ধে গত ১৮ নভেম্বর দুদকের খুলনা জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক খন্দকার কামরুজ্জমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। করোনার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ গত ২৭ সেপ্টেম্বর খুলনা সদর থানায় জিডি করেন। পরে জিডির কপিসহ দুদকে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলাটি করা হয়।
এমইউ