ভূমিহীনদের ফসলী জমি থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ

জাগরণ প্রতিবেদক প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২২, ০৬:০৩ পিএম ভূমিহীনদের ফসলী জমি থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ
ছবি- জাগরণ।

বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি// 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ভূমিহীনদের মাঝে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া সরকারি খাস জায়গার বালিয়াদহ বিলের ফসলী জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত আবেদন করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না দরিকান্দি ভূমিহীন সমবায় সমিতির সদস্যরা। 

উপজেলার দরিকান্দি ভূমিহীন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুন মিয়া গত ২৪ জানুয়ারি ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়ন থেকে বালু উত্তোলন করে রূপসদী ইউনিয়নের সরকারি খাস জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। 

ভূমিহীন সমবায় সমিতির লিখিত সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯-২০০০ সালে ফরদাবাদ ইউনিয়নের ফরদাবাদ মৌজার বলিয়াদহ বিলে ১৭২ জন ভূমিহীনদের মাঝে সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত দেন জেলা প্রশাসক। ওই জমিতে চাষাবাদ করে ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। গত ১০-১৫দিন ধরে উপজেলার রূপসদী গ্রামের নবী মিয়ার নেতৃত্বে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী সেলো চালিত ইঞ্জিনের নৌকা দিয়ে বলিয়াদহ বিল থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছেন। বালু উত্তোলনে বাধা দিলেও প্রভাবশালীরা তা আমলে নেননি। এভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ভূমিহীনদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকৃত জায়গা ফসল ফলানোর অনুপযোগী হয়ে পড়বে। ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সভার কার্যবিবরণী ও জেলা প্রশাসক ভূমিহীনদের জমি চিহ্নিত (ডিমারগেশন) করে দেন। সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে ও সকল ভূমিহীনদের ফসলী জমি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইউএনও’র কাছে অনুরোধ করেন তিনি।
 

উপজেলার দরিকান্দি ভূমিহীন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুন মিয়া বলেন, ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সভায় ফরদাবাদ ও সাতদৌনা মৌজার ২৩৮ একর জায়গা কবুলিয়ত দলিল মূলে ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। ২৩৮ একর ভূমি সীমানা পিলারের মাধ্যমে চিহ্নিত ও করা হয়েছে। কিন্তু আরেক ইউনিয়নের খাস জায়গা ভরাটের জন্য বালিয়াদহ বিল থেকে খননযন্ত্রে ও মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ইউএনও’র সাথে দেখা করেছি, লিখিত দিয়েছি। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। উল্টো বলছেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের জন্য বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য বালু উত্তোলন হলে সেটি তো টেন্ডারের মাধ্যমে করতে হবে। এরজন্য বরাদ্দ আছে। আমাদের ফসলি জমি কেন নষ্ট করতে হবে। পদক্ষেপ নেয়ার কথা বললেও ইউএনও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেননি। এখনো খননযন্ত্র চলছে। আমাদের জমিতেই খননযন্ত্র লাগানো রয়েছে।   

রূপসদী ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, আমি একসময় ফরদাবাদ ইউনিয়নে চাকরি করেছি। ভূমিহীনদের মাঝে উপজেলার ফরদাবাদ, সাতদৌনা ও কাজিরচর মৌজা থেকে কবুলিয়ত দলিলমূলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। তবে ভূমিহীনরা বন্দোবস্তের জায়গায় ভোগ দখলে যাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরদাবাদ ইউনিয়নের ফরদাবাদের বালিয়াদহ বিলের পশ্চিমপাশের ফসলি জমি থেকে শ্যালো চালিত খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলনকৃত বালু রূপসদী ইউনিয়নের রূপসদী পশ্চিপাড়ার ২৭ শতক ডোবা শ্রেণির সরকারি খাস জমি ভরাট করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অর্ধেকের বেশি ভরা করা হয়েছে। আনুমানিক  প্রায় দেড় লাখ ঘনফুট বালু ফেলা হয়েছে বলে স্থানীয় ভূমিহীনরা জানান।  

নবী মিয়া বলেন, চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের লোকজনের কথা মতো বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত টাকা আমাকে দেয়নি। বলেছে আমাকে ন্যায্য টাকা দিবে, আমি শুধু বালু উত্তোলন করছি। 

রূপসদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম বলেন, বন্দোবস্ত দেয়া জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে না। তারপরও ভূমিহীনরা যদি মনে করেন যে বন্দোবস্ত পাওয়া জমি থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তাহলে স্থানীয় নায়েবকে সঙ্গে নিয়ে যেতে বলেন। এমননি হলে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হবে।    

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা শমসাদ বেগম বলেন, আমরা তাঁদের লিখিত আবেদন পেয়েছি। তাদের আবেদন অনুসারে প্রথম যেখান থেকে বালু উত্তোলন করা হয়েছিল, সেখান থেকে খননযন্ত্র সরানো হয়েছে। বর্তমানে বন্দোবস্ত পাওয়া জমি থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে না।

 

এসকেএইচ//