পণ্য পরিবহনের গাড়ি থেকে একটি নুডলসের প্যাকেট আর নারিকেল তেল চুরি হয়েছে। এমন অভিযোগে ১৮ বছর বয়সী তরুণকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন করেছেন শেখ আমানুল্লাহ নামে এক ব্যবসায়ী। নির্যাতনের একটি ভিডিও এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। ভিডিওটি এখন সবার মুঠোফোনে।
ঘটনাটি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার। মঙ্গলবার দুপুরে আলমডাঙ্গা পৌর শহরের হাফিজ মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী তরুণের নাম সাদ্দাম হোসেন। তিনি পৌর এলাকার থানাপাড়ার আকমল হোসেনের ছেলে।
সাদ্দামকে খুঁটিতে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালানো ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই নজরে পড়ে পুলিশের। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্যাতনকারী শেখ আমানুল্লাহকে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে আটক করা হয়েছে। নির্যাতিত সাদ্দামের পরিবারের কেউ অভিযোগ জানালে আমানুল্লাহর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নির্যাতনের শিকার তরুণ সাদ্দাম হোসেনও একজন অপরাধী। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা পৌর শহরের হাফিজ মোড়ে শেখ ট্রেডার্স প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পণ্যের পরিবেশক শেখ আমানুল্লাহ। বিভিন্ন দোকানের অর্ডারের পণ্য ডেলিভারির জন্য মঙ্গলবার দুপুরে গাড়িতে মালামাল তুলছিলেন শেখ ট্রেডার্সের কর্মচারীরা। এ সময় ওই গাড়ি থেকে এক প্যাকেট নুডলস ও নারিকেল তেল নিয়ে দৌড় দেন সাদ্দাম। বিষয়টি দেখে স্থানীয় কয়েকজন তার পিছু নেন। ধাওয়া করে সাদ্দামকে ধরে শেখ ট্রেডার্সের মালিক আমানুল্লাহর কাছে হস্তান্তর করেন তারা।
পরে আমানুল্লাহ নিজেই দোকানের সামনের একটি খুঁটিতে সাদ্দামের দুই হাত পেছনে বেঁধে রাখেন। এরপর স্টিলের পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। এ ঘটনা দেখে সেখানে জড়ো হতে থাকেন লোকজন। সাদ্দামকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন আমানুল্লাহ। ব্যাপক জেরার সঙ্গে সঙ্গে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন।
মধ্যযুগীয় কায়দায় চালানো নির্যাতনের ঘটনাটি অনেকেই দেখেছেন। তবে কাউকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। কেউ কেউ বলেছেন- কিশোর সাদ্দাম হোসেনের মা খুবই গরিব। তিনি রাস্তার ধারে পিঠা বিক্রি করে সংসার চালান। অভাবের তাড়নায় হয়তো সাদ্দাম একটু নুডলস চুরি করে থাকতে পারেন। তাই বলে একজন ব্যবসায়ী তাকে যেভাবে নির্যাতন করেছেন, তা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া যায় না।
প্রকাশ্যে নির্যাতনের চিত্র দেখা দর্শকদের মধ্যে কয়েকজন বলেন, খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পাইপ দিয়ে মারধর দেখে ভেবেছিলাম বড় ধরনের কোনো অপরাধী। কারণ আরো অনেকেই দাঁড়িয়ে ঘটনাটি দেখছিলেন। এ জন্যই নির্যাতনকারী ওই ব্যক্তিকে থামানোর জন্য কোনো কিছু বলিনি। পরে জানতে পারি ওই তরুণ সামান্য নুডলস নিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন অপরাধের কারণে এ ধরনের নির্মম নির্যাতন কখনোই মেনে নেয়া যায় না। নির্যাতনকারী ওই ব্যবসায়ীর শাস্তি হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা।
এদিকে, সাদ্দামকে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মম নির্যাতনের একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। বর্বরোচিত এ ঘটনার ভিডিও দেখে হতবাক সুশীল সমাজের লোকজন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
স্থানীয়রা জানায়, অপরাধী যত বড়ই হোক না কেন, তার জন্য আইন আছে। আর মারধর করারও একটা সীমা আছে, প্রকাশ্যে দোকানের খুঁটিতে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমানুল্লাহর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তারা।
নির্যাতনকারী শেখ আমানুল্লাহ বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমার প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা ঘটে। এতে আমি অতিষ্ঠ। কিছুতেই চোর ধরতে পারছিলাম না। আজ কিছু নারিকেল তেল ও নুডলসের প্যাকেট চুরির সময় সাদ্দামকে হাতেহাতে ধরে স্থানীয়রা আমার কাছে নিয়ে আসেন। তবে দোকানের খুঁটিতে বেঁধে মারধর করা আমার অন্যায় হয়েছে।
আলমডাঙ্গা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর খন্দকার মুজিবুল ইসলাম বলেন, সাদ্দামের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আছে। এর আগেও শেখ ট্রেডার্স থেকে বিভিন্ন মালামাল চুরি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার চুরির সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে ধরে। পরে আমানুল্লাহ দোকানের খুঁটিতে বেঁধে সামান্য মারধর করেছেন বলে শুনেছি। তবে এভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি অন্যায় হয়েছে তার। মারধর না করে পুলিশে দেওয়া উচিত ছিল।
চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার বলেন, দোকানের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা যদি সত্যি হয়, তাহলে এটিই তো বড় অপরাধ। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। অপরাধীকে অবশ্যই আইনের কাছে সোপর্দ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নির্যাতনের শিকার তরুণ বা তার পরিবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে মানবতা ফাউন্ডেশন থেকে তাকে বিনামূল্যে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে সাদ্দামকে উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়। তবে নির্যাতনের বিষয়টি তখন জানা ছিল না। পরে সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিও দেখেছি। এভাবে কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। রাতেই নির্যাতনকারী শেখ আমানুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনায় সাদ্দাম বা তার পরিবারের লোকজন অভিযোগ করলে আমানুল্লাহর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, সাদ্দামের বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানায় একটি চুরি ও একটি ছিনতাই মামলা চলমান। একবার পুলিশের হাতে আটকও হয়েছিলেন তিনি।
ইউএম