কথিত শ্রমিক নেতার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ অটো চালক-মালিক

মোহাম্মদ আলি, চট্রগ্রাম প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২, ০৪:৪২ পিএম কথিত শ্রমিক নেতার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ অটো চালক-মালিক

চট্টগ্রাম নগরীর প্রবেশমুখে রাস্তার মাথা এলাকায় কথিত শ্রমিক নেতা নামধারী একদল দুর্বৃত্তের চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের ফলে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে সিএনজি চালক-মালিক ও স্থানীয়রা। রাস্তার মাথা পরিচালনা কমিটির নামে মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে এসব অপকর্ম চলছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে সিএনজি চালকরা। 

চালকরা জানান, তার রয়েছে প্রায় ৭০ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী ও একটি টর্চার সেল। নিয়মিত চাঁদা না দিলে ওই বাহিনীর সদস্যরা টর্চার সেলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এসব ব্যাপারে থানা ও আদালতে ডজন খানেক মামলা থাকলেও রহস্যজনক কারণে নিরবতা পালন করছে স্থানীয় থানা ও ট্রাফিক পুলিশ।

বিশাল এই বাহিনীর খরচ মেটাতে পরিবহনে চাঁদাবাজির পাশাপাশি করছেন চুরি ছিনতাই ও মাদকের কারবার, প্রয়োজনে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। আর এসব অপকর্মের অর্জিত আয়ের একটা অংশ সরকার বিরোধী কাজেও ব্যয় করছেন বলে জানা গেছে। তবে মাঝে মাঝে র‌্যাবের জোড়ালো ভুমিকার ফলে গা ঢাকা দিলেও পরে আবার নির্বিঘ্নে চালায় অপকর্ম। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চালকেরা জানায়, রাউজান রাঙ্গুনীয়া ও হাটহাজারী রুটে প্রায় ৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে আর এসব গাড়িগুলো রাস্তার মাথা হইতে যাত্রী ওঠা-নামা করার ফলে এখানে চাঁদাবাজির মেইন পয়েন্ট হয়ে দাড়িয়েছে। 
প্রতিটি সিএনজিকে মাসিক ৫৫০ টাকা এবং নাম্বার বিহীন সিএনজিকে ৮০০ টাকা দিয়ে টোকেন নিতে বাধ্য করে মো: আবুল হোসেনের চট্টগ্রাম অটোরিক্সা অটো টেম্পু চালক সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পরিচালনা কমিটি নামক সিন্ডিকেট। 

এছাড়াও প্রতিটি সিএনজি যাত্রী তোলার সময় দিতে হয় ১০ টাকা করে। এভাবে সিএনজি প্রতি গড়ে একশ থেকে দেড়শ টাকা চাঁদাবাজি করে যার পরিমান দাঁড়ায় দৈনিক প্রায় ৬ লাখ টাকা যা মাসে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। 

এসব চাঁদা আদায়ের জন্য তার রয়েছে প্রায় ৭০ জনের একটি বাহিনী। দৈনিক ৪ শিফটে সকাল ৬ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত সিএনজি থেকে টাকা তোলার জন্য প্রতি শিফটে রয়েছে ১৫ জন করে ৬০ জনের গ্রুপ। এর বাইরে রয়েছে আরও একটি স্পেশাল গ্রুপ। যদি কোন চালক চাঁদা দিতে অস্বীকার বা গড়িমসি করে তাহলে তাদেরকে ধরে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী রেলের জায়গা দখল করে বানানো টর্র্চার সেলে, সেখানে নিয়ে চলে মারধর ও নির্যাতন। এমনকি গাড়ি আটক করে মালিক থেকে আদায় করা হয় মোটা অংকের চাঁদাও। 

অপর একটি সূত্র জানায়, চাঁদা তোলার দায়িত্বে যারা আছে তাদের ডিউটি দৈনিক ৬ ঘটা হওয়ায় বাকী সময়টা তারা চুরি ছিনতাই মাদক সেবন ও পাচারের কাজে ব্যয় করে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রহস্যজনক কারনে অনেক সময় দেখেওে না দেখার ভান করে চলে যায়। যা একান্তই ধামচাপা দেয়ার মত নয় সেগুলোই কেবল মামলা হিসেবে এন্ট্রি করে । আবার অনেক সময় থানায় মামলা না নেয়ার অভিযোগও করেন অনেকে। এর ফলে আদালতে মামলা দায়ের করতে বাধ্য হয়েছেন বিবাদীরা। 

বর্তমানে কথিত শ্রমিক নেতা জাহেদ, হাসান, আজাদ, ভুট্রো হাওলাদার, রাসেল, মানিক, জাফর, সাহেদ, রানা, শাহেদ আলী ও রাশেদুল ইসলাম এই সিন্ডিকেটের অন্যতম। 

রাঙ্গুনীয়া উপজেলার মরিয়ম নগরের কুমার পাড়ার এক দরিদ্র ঘরে জন্ম কথিত এই শ্রমিক নেতা আবুল হোসেনের বিগত ২০১১ সালেও রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসি হওয়া সালাউদ্দিন কাদেরের আস্থাভাজন এনডিপি নেতা আলতাফ কানা আলতাফের সাথে ছিল সখ্যতা। অভাব অনটনে চলতে না পেরে ২০১২ সালে পাড়ি জমান চট্টগ্রাম শহরে , সিএন্ডবি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থেকে সিএনজি চালাতো ২০১৩ সালে আজাদ নামের একজনের অধীনে রাস্তার মাথা এলাকায় সিএনজির লাইনম্যানের কাজ করার পাশাপাশি ফুটপাত থেকে চাঁদাও তুলতেন। একই বছরের শেষের দিকে চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য হন। ২০১৪ সালে শ্রমিক নেতা হারুন উর রশিদের সাথে মিলে চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য হন। সেই থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

কথিত এই শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে।
 
তার দলের সদস্য ছাড়াও এই টাকার ভাগ পেয়ে থাকেন স্থানীয় থানা ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। এছাড়া কিছু নেতাও। সবাইকে দিয়ে নিজে হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। তার গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনীয়ায় গড়ে তুলেছেন আলিশান ভবন। বোয়ালখালী পৌরসভা এলাকায় কিনেছেন জমি, ভবন নির্মানের কাজ চলমান আছে। স্থানীয় বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানের সাথে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ২০১৮ সালের নির্বাচনে অনেক টাকা খরচ করেছেন বলেও গোপন সূত্র জানিয়েছে। 

বিএনপির দলীয় কার্যক্রমে ব্যয় করেছেন বিপুল অর্থ যার একটা অংশ সরকার বিরোধী কাজেও লাগিয়েছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে লাগিয়েছেন পোস্টার। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবি দিয়ে ছাপানো পোস্টারে নিজেকে রাঙ্গুনীয়া উপজেলা ছাত্রদলের নেতা প্রমান করতে চেষ্টা করেন। তবে বর্তমানে তিনি চান্দগাঁও থানা যুবদলের নেতা দাবি করছেন।

শ্রমিক নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করলেও সিএনজি থেকে চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করে মো: আবুল  হোসেন বলেন, আমরা আমাদের সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে থাকি চাঁদার জন্য কারো উপর নির্যাতন করিনা। টর্চাল সেলে নিয়ে নির্যাতনের একটি ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে আছে জানালে তিনি এড়িয়ে যান।

জাগরণ/আরকে