দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ সয়াবিন উৎপাদনের কেন্দ্রস্থল লক্ষ্মীপুর জেলা। এ অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের সয়াবিন উৎপাদন হলেও বর্তমানে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সয়াবিন-১ ও ২ (বিইউ সয়াবিন-১ ও বিইউ সয়াবিন-২)’ এ দুই জাতের সয়াবিন বীজ দ্বিগুন ফলন হচ্ছে। যা চাষ করে কৃষকরাও ব্যাপক লাভবান হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বৃহত্তর এশিয়া মহাদেশের মধ্যে এ দু’জাতের সয়াবিনের সর্বোচ্চ ফলন হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদী উচ্চফলনশীল ও প্রোটিন সমৃদ্ধ সয়াবিন বীজ উৎপাদেন জাত বিইউ সয়াবিন-১ ও ২ ভূমিকা রাখবে।
গত সোমবার লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার খায়েরহাট বাজার এলাকায় উন্নত জাতের সয়াবিন বীজ বর্ধন, সম্প্রসারণ এবং মার্কেটিং সংক্রান্ত বিষয়ক ‘ক্রস ভিজিট’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন কৃষিবিদ বক্তারা।
বাজারে এ দুই জাতের বীজের চাহিদা বেশি থাকায় নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে এর সম্প্রসারণ ও বাজারজাতকরণের জন্য এনজিও সংস্থা ‘সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
এতে বক্তারা বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সয়াবিন উৎপাদন কেন্দ্র ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাকেও হার মানিয়েছে বিইউ সয়াবিন-১ ও ২। দেশ দু’টির ফলনের চেয়েও বর্তমানে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে জাত দু’টির বীজের ফলন বেশি। তাই অনুন্নত সয়াবিন বীজ ব্যবহারের পরিবর্তে বিইউ
সয়াবিন-১ ও ২ জাতের সয়াবিন আবাদে কৃষকরা উৎসাহী হওয়া উচিত। এজন্য চলতি মৌসুমে কৃষকদের মাঝে উন্নত জাতের বীজও সরবরাহ হয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, চলতি বছর ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদ, অতিবৃষ্টি ও বন্যার করণে এ অঞ্চলের সয়াবিন চাষ পিছিয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় আবাদি জমিও কমে গেছে। গত বছর ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ হলেও চলতি বছর মাত্র ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। এতে ৭ হাজার হেক্টর জমির সয়াবিন চাষ ব্যহত হয়। তবে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে যে পরিমান সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, তা গত বছরের চেয়েও উৎপাদন বেশি হবে। অনুন্নত জাতের সয়াবিন চাষে হেক্টর প্রতি ১ টন সয়াবিন উৎপাদন হতো, বর্তমানে বিইউ-১ ও ২ চাষে হেক্টর বেঁধে আড়াই টন সয়াবিন উৎপাদন হবে। আবার কোন কোন জমিতে হেক্টর প্রতি ৪ টন সয়াবিন উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। সয়াবিন থেকে ভোজ্যতেল ও বিভিন্ন ফুডস্ উৎপাদনসহ দেশের বাহিরে রপ্তানি করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
‘সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’র কৃষিবিদগণ বলেন, উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা অনুসরণ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি রবি মৌসুমে এখানে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ৪৫ টন বীজ উৎপাদনের আশা করা যাচ্ছে। ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এ দুই জাতের বীজের ফল চলে আসে। এক একটি সয়াবিন গাছে অনেক ছড়া ফলন হয়। বিইউ-১ এ দানা সাইজে বড়। বিইউ-২ জাত লবন সহনীয়। যা উৎপাদনে কৃষকদের আশার আলো দেখাবে। জাত দুটি চাহিদা বাড়লে বিভিন্ন কোম্পানী এ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করার সম্ভবনা রয়েছে। তাই অনুন্নত জাতের বীজ ব্যবহার না করে উন্নত জাতের বিইউ-১ ও ২ জাতের সয়াবিন বীজ আবাদের আহবান কৃষিবৃদদের।
আয়োজিত ক্রস ভিজিট অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন। ‘সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’ জেলা কো-অডিনেটর প্রদীপ কুমার রপ্তান এর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কমলনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইকতারুল ইসলাম, ‘সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’র প্রোগ্রাম অফিসার কৃষিবিদ মো. ফরহাদ হোসেন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন- উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা জামসেদ আলম, উদ্যোগক্তা কৃষক নুর উদ্দিন ও মো. হাতেম, বিভিন্ন বীঝ উৎপাদক ও ব্যবসায়ীগণ। অনুষ্ঠান শেষে উন্নত জাতের বিইউ সয়াবিন-১ ও ২ জাতের বীজের প্রদশণী জমি গুলো পরিদর্শণ করেন অতিথিবৃন্দ।