আব্দুল বাতেন, রাজশাহী
সারাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ যখন অতিষ্ঠ। ঠিক তখন রাজশাহীর অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম ভাবে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধি করে ফেলছে। অপরদিকে টিসিবি দোকানগুলোতে সাধারণ মানুষ তেল, ডালসহ অন্যান্য দ্রব্য কিনতে ঝুঁকলে ডিলাররা কালো বাজারে এসন পণ্য বিক্রি করে অধিক মূনাফা লুফছে। ফলে তিলিকের মধ্যেই টিসিবির ট্রাকগুলো হতে এসব পণ্য বিক্রি দেখাচ্ছে ডিলাররা।
কিন্ত এর ভেতরের চিত্র রহস্যে ঘেরা। গত কয়েকদিন হতেই রাজশাহী জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে খবর ছিলো নগরীতে সয়াবিন তেল অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগীয় দপ্তরের সহকারী পরিচালক হাসান-আল-মারুফ অভিযান চালায় বাজারে। বুধবার (২ মার্চ) নগরীর উপ-শহর নিউ মার্কেট এলাকায় মেসার্স এস আলম ট্রেডার্সে যান তারা। তাঁদের একজন কর্মকর্তাকে ক্রেতা সাজিয়ে তিনি দুই লিটার সয়াবিন তেল কেনা হয়। দোকানি দাম রাখেন ৩৪০ টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩১৬ টাকা। এ জন্য ওই দোকান সিলগালা করা হয়েছে।
আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে দোকানমালিক এস আলমকে তাঁদের কার্যালয়ে এসে শুনানিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। শুনানি শেষে আইন অনুযায়ী শাস্তি নির্ধারিত হবে ।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগীয় দপ্তরের সহকারী পরিচালক হাসান-আল-মারুফ একজন ভোক্তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা জানতে পারেন, নগরের সাগরপাড়া এলাকায় রাজশাহী কিচেন বাজার ক্রেতার কাছে সয়াবিন তেল না বিক্রি করে ফিরিয়ে দেন। পরে ওই দোকানে তিনি তাঁর গাড়িচালককে ক্রেতা সাজিয়ে পাঠান।
ওই দোকানি আবার জানান, তাঁর দোকানে তেল নেই। কিন্তু পরে বেলা একটার দিকে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, তাঁর দোকানে পর্যাপ্ত সয়াবিন তেল রয়েছে। এ জন্য দোকানমালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ছাড়া নগরের ঘোষপাড়া এলাকায় রাম স্টোরে তেলের মোড়কে ‘এমআরপি লেখা’ মুছে বেশি দামে বিক্রি করার অপরাধে আট হাজার টাকা জরিমানা করেন ভোক্তা অধিকার।
গত ১ মার্চ রাজশাহীর নগরীর হড়গ্রাম বাজার এলাকার বকুল স্টোরে অভিযান চালিয়ে মুদি দোকানে খোলাবাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ টিসিবির ৭০টি খালি তেলের বোতল পাওয়া গেছে। ওই বোতলগুলোর তেল লুকিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন দোকানের মালিক। এ ঘটনায় ওই দোকানের মালিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অপরদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরীর সাহেব বাজার, লক্ষীপুর, কোর্ট বাজারের অধিকাংশ দোকানেই নেই বোতলজাত সয়াবিন তেল। তবে খোলা পাওয়া যাচ্ছে। দোকান গুলোতে ৫০০ লিটারের তেলের বোতন চোখে পড়লেও ১ থেকে ৩ লিটারের তেল দেখা মেলেনি।
মুদিদোকানিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীর অলিগলির ছোট বড় কোন দোকানে ৫ লিটারের বোতল তেল নেই। যা ছিলো তা আগেই বিক্রি করেছেন। মুদি দোকান ও সুপারস্টার ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের ভাষ্য কোম্পানীকে অর্ডার দিয়েও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। আগামীতে তেলের দাম আরো বাড়তে পারে বলে তারা জানান।
হঠাৎ তেলের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। দ্রুত বাজার মনিটরিং এর মাধ্যমে এর লাগাম টেনে ধরার অনুরোধ জানান ক্রেতারা।
হাসান-আল-মারুফ আরও বলেন, তাঁরা ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছেন। যেখানে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করা হবে, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ জন্য ভোক্তাদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।