ফুলবাড়ী প্রতিনিধি
দিনাজপুর ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের দাদপুর (বুড়াবন্দর) এলাকার আফতার আলীর হাসকিং মিল ঘরের বারান্দা থেকে শহিদুল ইসলাম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের গলাকাটা ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় লাশের কাছ থেকে রক্ত মাখা ৪ ইঞ্চি সাইজের একটি ছুড়ি ও জমিজমা সংক্রান্ত মামলার নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে।
নিহত শহিদুল ইসলাম উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর নয়াপাড়া গ্রামের মৃত আশরাফ মণ্ডলের ছেলে এবং পেশায় একজন দিনমজুর ছিলেন।
আফতারা আলীর হাসকিং মিলের পাহারাদার কানু মোহন্ত বলেন, গত দেড়মাস থেকে মিলটি বন্ধ রয়েছে। রবিবার রাতে মিলটি পাহারার এক পর্যায়ে রাত ৪ টার দিকে পেছনে গিয়ে পরিত্যক্ত মিল ঘরের বারান্দায় এক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ দেখতে পাই। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে মিল মালিক আফতার আলীসহ স্থানীয়দের জানানো হয়।
হাসকিং মিল মালিক আফতার আলী বলেন, মিলের পাহারাদারের মাধ্যমে ঘটনাটি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে শহিদুল ইসলামের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। বিষয়টি শহিদুল ইসলামের পরিবার ও থানা পুলিশকে জানানো হয়। মিলটি গত দেড় মাস থেকে বন্ধ থাকার সুযোগে দুস্কৃতিকারীরা শহিদুল ইসলামকে হত্যার পর মিলঘরের বারান্দায় লাশ ঝুলিয়ে রেখে চলে গেছে। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধারসহ লাশের পাশ থেকে রক্ত মাখা একটি ছুরি ও জমিজমার মামলার সংক্রান্ত নথিপত্র জব্দ করেছে। তবে শহিদুল ইসলাম একজন নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।
নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী কাওছারা বেগম বলেন, বসতভিটা জমিজমার মালিকানা নিয়ে স্থানীয় হামিদুল ইসলাম নামের ব্যক্তির সাথে আদালতে মামলা মোকদ্দমা চলছে। রবিবার (১৭ এপ্রিল) ওই মামলার শুনানীর তারিখ ছিল আদালতে। এ কারণে রবিবার সকাল ৯ টার দিকে দিনাজপুর আদালতে যাওয়ার জন্য মামলার নথিপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তার স্বামী শহিদুল ইসলাম। কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলেও শহিদুল ইসলাম বাড়ি না ফেরায় মুঠোফোনে দিনাজপুরে তাদের উকিলের কাছে শহিদুল ইসলামের অবস্থান জানতে চান। কিন্তু উকিল জানান, বিকেলের আগেই শহিদুল ইসলাম দিনাজপুর থেকে ফুলবাড়ী চলে গেছেন। উকিলের কাছ থেকে এ কথা শুনে গোটা পরিবারের লোকজন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ফুলবাড়ী পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে শহিদুল ইসলামকে গভীর রাত পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করেও তার কোন সন্ধান করতে পারেননি।
সোমবার ভোরে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের দাদপুর বুড়াবন্দর এলাকার আফতার আলীর বন্ধ হাসকিং মিল ঘরের বারান্দায় স্বামীর (শহিদুল ইসলাম) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জমিজমার মামলার বিরোধেই প্রতিপক্ষরা তার স্বামীকে গলা কেটে হত্যার পর লাশ মিলঘরের বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখে। হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান তিনি।
নিহত শহিদুল ইসলামের ছেলে মো. কামরুজ্জামান ও মেয়ে মোছা. নূরী আক্তার বলেন, জমিজমার বিরোধের কারণেই প্রতিপক্ষরা তাদের পিতাকে হত্যা করেছে। দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
জমিজমা সংক্রান্ত মামলার প্রতিপক্ষ হামিদুল ইসলাম বলেন, তার সাথে জমিজমার মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে তাকে জড়িয়ে যে অভিযোগ করছে নিহতের পরিবারের লোকজন সেটি পুরোপুরি মিথ্যা। শহিদুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের সাথে তিনি কোনভাবেই জড়িত নন। তিনিও প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, শহিদুল ইসলামের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ হত্যাকারীদের শনাক্তসহ গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।
জাগরণ/আরকে