কক্সবাজারে জাল নোটের ছড়াছড়ি

কক্সবাজার প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২২, ০১:২৬ পিএম কক্সবাজারে জাল নোটের ছড়াছড়ি

দীপন বিশ্বাস
কক্সবাজার জেলা সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারগুলোতে জাল টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে। বিশেষ করে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে এর ভয়াবহতা বেশি দেখা যাচ্ছে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে এসব জাল নোট তৈরীর কারবারী ও পাচারকারীরা খুবই তৎপর। প্রতিদিনই এসব জাল টাকা ধরা পড়ছে হাটবাজারগুলোতে। 

তাছাড়া কক্সবাজারের ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় এসব জাল নোট ধরা পড়ছে। বিশেষ করে গ্রামের হাটবাজার ও রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বাজারগুলো এসব কারবারী ও পাচারকারীদের টার্গেট। এরা বিভিন্ন কৌশলে এসব টাকা সহজ সরল মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। এসব কারবারীরা ধরাও পড়ছে জেলও হচ্ছে। আবার আইনের ফাঁকে বের হয়ে একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) ভোরে উখিয়া কুতুপালং এর ১নং লাম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১৬ লাখ টাকার জাল নোটসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে আমর্ড পুলিশ সদস্যরা। একই সঙ্গে তাদের পাচারকাজে ব্যবহৃত মটর সাইকেলটিও জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- উখিয়া হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মৃত আজিজুর রহমানের পুত্র মোহাম্মদ রহিম ও পশ্চিম হলদিয়া পালং ফিরোজ মিয়ার পুত্র সরোয়ার কামাল (১৮)।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ১৪ আমর্ড পুলিশের অধিনায়ক নাঈমুল হক জানান, একটি দল দীর্ঘদিন ধরে টাকা নকল করছিল। ঈদকে সামনে রেখে সেই টাকা তারা ক্যাম্পের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া চেষ্টা করে। এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তের পর দুজনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকার জাল নোট এবং একটি মটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। পরে তাদের উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, রোহিঙ্গা শিবিরসহ জেলার বেশ ক’টি স্থানে গড়ে উঠেছে জাল টাকা তৈরির কারখানা। গত ৩০ মার্চ কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলা গেইটের সামনে রাবেয়া এন্টারপ্রাইজ নামক কম্পিউটার দোকান থেকে র‌্যাব-৭ অভিযান চালিয়ে ১৬ লাখ জাল টাকা উদ্ধার ও জাল টাকা তৈরির মূলহোতা মিজানসহ তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে। 

তারা হলো- বড়ঘোপ ইউপির মনোহরখালী এলাকার হাফেজ শহীদ উল্ল্যাহর ছেলে জাল টাকা তৈরীর সিন্ডিকেটের মূলহোতা সাঈফ উদ্দিন আহম্মদ প্রকাশ মিজান (২৫) এবং তার দুই ভাই সহযোগী উপজেলা পরিষদের সচিব মেজবাহ উদ্দিন আহম্মদ (৩২), মো: জিয়া উদ্দিন (২১) সহ কৈয়ারবিল ইউপির নজর আলী মাতবর পাড়া এলাকার ওমর আলী ছেলে সাইফুল ইসলাম (২২)। পরে তাদের ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

সূত্রটি আরো জানায়, পাচারকারী সিন্ডিকেটটি বেশিরভাগ ব্যবহার করে শিশু-কিশোরদের। শিশু ও কিশোরদের দিয়ে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহের জন্য ক্রেতা সাজিয়ে বাজারে পাঠায়। শিশু ও কিশোরদের টাকা ব্যবসায়ীরা তেমন একটা খেয়াল না করে দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে দেয়। পরে এসব টাকা হাতবদল কিংবা ব্যাংকে গেলে ধরা পড়ে। যার ফলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিদিন জাল টাকার ফাঁদে পড়ছে।

বিভিন্ন সূত্র আরো জানায়, রোহিঙ্গা শিবিরে ১ লাখ টাকার জাল নোট আসল টাকায় বিক্রি হয় ২০/২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে। জাল নোটগুলো কিনে নিয়ে তারা বিভিন্ন হাটবাজারে ঢুকিয়ে দেয়। আবার অনেকেই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চোরাকারবারে নানা পন্য ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যবহার করছে। বহু জাল নোট মিয়ানমারেও চলে গেছে।

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, গোয়েন্দা নজর বাড়ানো হলে এবং পাচারকারীরা যাতে ধরা পড়লে সহজে জেল থেকে বের হতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখলে জাল টাকার ছড়াছড়ি বন্ধ হয়ে যাবে। 

জাগরণ/আরকে