সরকারের কাছে আরও দুই বছর গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বিজিএইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, বর্তমানে কোনভাবেই এখন শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা যোক্তিক হবে না। এতে বাড়বে উৎপাদন খরচ সেই সঙ্গে পোশাকখাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
বুধবার (২০ মার্চ) রাজধানীর বিজিএমইএ ভবনে শিল্পে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির নেতিবাচ প্রভাব সম্পর্কিত বিষয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহহমান।
রফতানি খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিটিএমইএ, বিকেএমইএ যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনসুর আহমেদ প্রমুখ।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গণশুনানিতে শিল্পে গ্যাসের মূল্য বর্তমানে প্রতি ঘনফুট ৭ দশমিক ৭৬ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৮ দশমিক ৪ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হতে পারে ১৩২ শতাংশ। এতে শিল্পে উৎপাদান খরচ বৃদ্ধি পারে প্রায় পাঁচ শতাংশ। আমরা মনে করি এই প্রস্তাবনা শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও বিকাশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই মূল্যবৃদ্ধি করা হলে বস্ত্র ও পোশাকখাতের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে এ খাতে মজুরি বাড়ছে। গত ডিসেম্বর থেকে নূন্যতম মজুরি ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে পোশাকের দরপতন হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ইউরোপে দরপতন হয়েছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তাই আমরা চাই কমপক্ষে দুই বছর শিল্পে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি যেন না হয়। এমনিতেই শ্রমিকদের বেতন আমরা বাড়িয়েছি। সেটাই এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, ২০১৮ সালে পোশাকখাতে নূন্যতম মজুরি বাড়ানো হয়, তখন আমাদের দাবি ছিল কোন উইটিলিটির দাম যেন না বাড়ানো হয়।
সরকার গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নয়নে কাজ করছে বলে জানিয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তারপরেও আমরা শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের চাপ পাচ্ছি না। গ্যাস পেলেও আবার অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিত সরবরাহ পাচ্ছি। আবার যতটুকু গ্যাস ব্যবহার করছি তারচেয়েও বেশি বিল পরিশোধ করছি। গ্যাস ব্যবহার না করেও তিতাস গ্যাস কোম্পানিকে বাতাসের মূল্য দিচ্ছি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ইবিসি মিটার চেয়ে আসছি, যাতে প্রেসার অনুযায়ী গ্যাসের দাম দিতে পারি।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু তার আগে নিশ্চিত করতে হবে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস প্রাপ্তির বিষয়টি। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে। ২০১২ সালে গ্যাস সংযোগের জন্য আমরা আবেদন করেছিলাম। তার সংযোগ কেবল পেতে শুরু করেছি। শিল্প-কারখানায় গ্যাস না পাওয়ার জন্য যে ক্ষতি হয়েছে সেটা পুষিয়ে নিতে হবে। আমাদের ইভিসি মিটার দিতে হবে। সরকার যেটা বলেছে ব্যাংকে ৯ শতাংশ সর্বোচ্চ সুদ হার হবে। আমরা ৬ শতাংশ হারে ব্যাংকে রাখতে পারবো । এটাই আজ পর্যন্ত ব্যাংক বাস্তবায়ন করতে পারলো না। আমরা এই কাজগুলো করার পর আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে পর্যায়ক্রমে যোক্তিক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে। আমাদের সঙ্গে এগুলো ঠিক না করে হঠাৎ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মোট উৎপাদন গ্যাসের ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ সরবরাহ হয় শিল্পখাতে। এটা খুবই নগন্য। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ এমন কোন পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না যাতে করে শিল্পের বিকাশ রুদ্ধ হয়, শ্রমিক কর্মসংস্থান হারায়, অর্থনীতি গতিহীন হয়ে পড়ে। এমনিতেই বিভিন্ন সংকটে আমাদের গত পাঁচ বছরে এক হাজার ২০০ ছোট-মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়েছে।
বিকেএমইএর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, প্রতি ১০ বছরের জন্য একটি শিল্প পলিসি করা প্রয়োজন। কোন জিনিসের কেমন দাম বাড়ানো হবে সেটা এ পলিসিতে থাকবে। তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোও সে অনুয়ায়ী পরিকল্পনা করতে পারবে।
তিনি বলেন, বরাদ্দ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট গ্যাস কোম্পানিগুলো গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। অন্যদিকে ইন্ডাস্ট্রিতে যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে তা ক্লিন নয়। এর প্রভাবে শিল্পের যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এর ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে না। আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি গ্যাস সংকটের কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ যে সকল মিল আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ না করা পর্যন্ত গ্যাসের কোন প্রকার মূল্য বৃদ্ধি অগ্রহণযোগ্য।
নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন - বিকেএমইএ এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে কি না সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। এমনিতিই খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাপে ব্যবসায়ীরা।
এআই/এসএমএম