৩৫% পর্যন্ত লভ্যাংশ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো

জাগরণ প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২১, ০৮:০১ পিএম ৩৫% পর্যন্ত লভ্যাংশ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর জন্য নগদ ও বোনাস মিলে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার যে সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তা বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, “প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ইতোপূর্বে গৃহীত ডেফারেল সুবিধার অধীনে নয় বা বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষে এরূপ কোন ধরণের ডেফারেল সুবিধা গ্রহণ ব্যতিরেকে যে সকল ব্যাংক ঝুঁকি ভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ২.৫% ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১৫% বা তার বেশি মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সে সকল ব্যাংক তাদের সামর্থ্য অনুসারে সর্বোচ্চ ১৭.৫০% নগদসহ মোট ৩৫% ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।”

সোমবার পুঁজি বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রতিনিধিদের বৈঠকে লভ্যাংশ ঘোষণার সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই মঙ্গলবার সার্কুলারটি জারি করা হয়েছে।

সোমবার বৈঠকের পর বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমরা পুঁজি বাজারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। এই আলোচনায় ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষমতা ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে।”

ব্যাংকের জন্য লভ্যাংশের সর্বোচ্চ সীমা ৩০ শতাংশ বেঁধে দিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি নতুন নীতিমালা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

করোনাভাইরাস মহামারীর সঙ্কটে ব্যাংকগুলো যাতে মুনাফা যথাসম্ভব অবণ্টিত রেখে মূলধন শক্তিশালী করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত তারল্য বজায় রাখতে পারে, সেজন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কিন্তু এই সীমা বেঁধে দেওয়ায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দর হারাতে শুরু করলে পুঁজি বাজারের সূচকও নেতিবাচক অবস্থানে চলে যায়। এরপরই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার বৈঠকে লভ্যাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

৭ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকগুলো তাদের শেয়ারধারীদের কত লভ্যাংশ দিতে পারবে, তা নির্ধারণ করে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নতুন ওই নীতিমালা অনুযায়ী, কোন ব্যাংক কত লভ্যাংশ দিতে পারবে, তা তাদের মূলধন কাঠামোর ওপর নির্ভর করবে। তবে কোনো ব্যাংক নগদ ও বোনাস মিলিয়ে ৩০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারবে না।

নীতিমালায় বলা হয়, মহামারির সঙ্কটে ব্যাংকগুলো যাতে মুনাফা যথাসম্ভব অবণ্টিত রেখে মূলধন শক্তিশালী করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত তারল্য বজায় রাখতে পারে, সেজন্য গত বছরের ১১ মে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছিল। ওই সার্কুলার শুধু ২০১৯ সালের জন্য প্রযোজ্য ছিল।

কিন্তু সামনের বছরগুলোতে ব্যাংকগুলোর মূলধন কাঠামো আরো সুসংহত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। সেজন্য সামগ্রিকভাবে বিবেচনায় শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে নতুন নীতিমালা অনুসরণ করতে বলা হয়েছিল।

যেসব ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাড়তি সময় নেয়নি এবং যেসব ব্যাংক মূলধনের পরিমাণ ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১৫ শতাংশ বা তার বেশি, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ২.৫ শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১৫% বা তার বেশি মূলধন সংরক্ষণ করেছে, তারা শেয়ারধারীদের ১৫ শতাংশ নগদসহ সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারবে।

যেসব ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাড়তি সময় নেয়নি এবং ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ২.৫ শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ১৩.৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করেছে, তারা ১২.৫ শতাংশ নগদসহ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দিতে পারবে।

যেসব ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাড়তি সময় নেয়নি এবং ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১১.৮৭৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করেছে, তারা সাড়ে ৭.৫ শতাংশ নগদসহ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দিতে পারবে।

যেসব ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাড়তি সময় নিয়েছে, মুনাফা থেকে তা সমন্বয়ের পর লভ্যাংশ দিতে পারবে। সে ক্ষেত্রে যেসব ব্যাংক ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১২.৫ শতাংশ বা তার বেশি মূলধন সংরক্ষণ করেছে, তারা ৬ শতাংশ নগদসহ ১২ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারবে।

যেসব ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাড়তি সময় নিয়েছে, মুনাফা থেকে তা সমন্বয়ের পর যারা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১১.৮৭৫ শতাংশ থেকে ১২.৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করেছে, তারা ৫ শতাংশ নগদসহ ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারবে।

 যেসব ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাড়তি সময় নিয়েছে, মুনাফা থেকে তা সমন্বয়ের পর যারা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ১০.৬২৫ শতাংশ থেকে ১১.৮৭ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করেছে, তারা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিতে পারবে।