শেষ মুহূর্তে জমজমাট সেমাইয়ের বাজার

সুব্রত চন্দ প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২১, ০৬:৩৪ পিএম শেষ মুহূর্তে জমজমাট সেমাইয়ের বাজার

ঈদ মানেই সকাল বেলা নতুন জামাকাপড় পরে নামাজ পড়া, এরপর বাসায় ফিরে সেমাই খাওয়া। বাঙালি ঈদের সঙ্গে যেন ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে সেমাই। তাই তো প্রতি বছর ঈদের আগে জমে উঠে সেমাইয়ের বাজার। করোনা সংক্রমণের মধ্যেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।

বৃহস্পতিবার (১৩ মে) বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হরেক রকমের সেমাইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। ক্রেতাদের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। মূলত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের ভিড়ই বেশি এই বাজারে।

কেউ কিনছেন খোলা সেমাই, তো কেউ প্যাকেটের। কারো চাহিদা ৫০০ গ্রাম, তো কারো দশ কেজি। কেউ-বা কিনছেন রঙ-বেরঙের লাচ্ছা সেমাই, কেউ-বা একেবারেই সাদামাটা লম্বা সেমাই। চাহিদা যার যেমনই হোক ঈদের দিন সকালে সেমাই খাওয়াই বড় ব্যাপার।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি ঈদেই কয়েকদিন আগে থেকে সেমাই বিক্রি শুরু করেন তারা। বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির প্যাকেটজাত সেমাই যেমন রয়েছে তাদের কাছে, তেমনি রয়েছে খোলা সেমাই। খোলা সেমাইয়ের মধ্যে রয়েছে আবার বিভিন্ন পদ। যেমন— ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই, লম্বা সেমাই, সাভারের আল মুসলিম ও রিমঝিমসহ নানা পদ।

তারা আরো জানান, প্যাকেট করা সেমাই ৩০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এগুলোর ওজন হয় ২৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম। এছাড়া খোলা সেমাইয়ের কেজি বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। ঈদকে কেন্দ্র করে একেকটা দোকানে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

অনেক দিন ধরে কারওয়ান বাজারে ঈদ মৌসুমে সেমাই বিক্রি করছেন আনছার মাঝি। এবারও দোকানের সামনে সাজিয়ে বসেছেন রঙ-বেরঙের সেমাই। তিনি জানান, সাভারসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে সেমাই আসে। প্যাকেটের সেমাই থেকে খোলা সেমাইয়ের চাহিদাই এখানে বেশি। কারণ খোলা সেমাইগুলো তাজা থাকে। কিন্তু প্যাকেটের সেমাই ভাজা হয় অনেকদিন আগে। এছাড়া দামেও অনেকটা সাশ্রয় হয়।

আনছার মাঝি বলেন, “প্রতি বছরে মতো এবার এক লাখ টাকা সেমাই উঠিয়েছি। এই কয়দিন বেচাকেনা না হলেও এখন শেষ মুহূর্তে প্রচুর বেচাকেনা হচ্ছে। আশা করছি রাতের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যাবে।”

মো. শরীফ নামের একজন বলেন, “আগে ঈদের ১০-১২ দিন আগে থেকেই বেচাকেনার ধুম পড়ে যেতো। কিন্তু গত বছরে থেকে করোনার কারণে সেটা হয়নি। তারপরও ঈদে সেমাই তো সবাই খায়। তাই শেষ মুহূর্তে হলেও ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে।”

কারওয়ান বাজার এবারই প্রথমবার সেমাইয়ের দোকান দিয়েছেন বাবু নামের এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, “নতুন হিসেবে আমার ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। সেমাই ছাড়াও যেসব মশলাপাতি ঈদের সময় দরকার হয়, সেগুলোও বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে।”

সাধারণত যারা ঢাকাতেই ঈদ কাটান, তারাই শেষ মুহূর্তে এখানে সেমাই কিনতে আসেন। এবার করোনার বিধিনিষেধের কারণে অনেক মানুষ গ্রামে যেতে পারেনি। তাই ভিড়ও একটু বেশি।

ছেলেকে নিয়ে ঈদের বাজার করতে এসেছেন আব্দুর রশিদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, “করোনার কারণে এবার গ্রামের বাড়ি যেতে পারিনি। তাই কারওয়ান বাজারে সেমাই কিনতে এসেছি। শুনেছি এখানে সেমাই ভালো, দামেও সস্তা।”

রহমত উল্ল্যা নামের আরেক ক্রেতা বলেন, “আমারা যারা স্থানীয় তারা ঈদের আগের দিনই বাজার করি। এর একটা সুবিধা অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা বাজার করা যায়, আরেকটা হলো টাটকা জিনিস পাওয়া যায়।”

শুধু সেমাই নয়, জমজমাট অবস্থা মশলার বাজারেও। আব্দুস সালাম নামের এক মশলার বিক্রেতা বলেন, “অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হলেও শেষ দিনে অনেক ক্রেতা মশলা কিনতে আসছেন। এবার মশলার দামও কম।”