উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলার (পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও নীলফামারী) ১১ হাজার ৪৩৩ দশমিক ৯৪ একর সমতল জমির ৯টি চা বাগান এবং ৮ হাজারেরও অধিক ক্ষুদ্রায়তনের চা বাগান থেকে সদ্য সমাপ্ত (২০২১) মৌসুমে চা উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল শুধু এক কোটি কেজি। বিগত বছরের তুলনায় ৪২ লাখ ৪০ হাজার কেজি বেশি উৎপাদনের মাধ্যমে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে চা বোর্ড।
শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) বিকালে পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ড থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
সূত্র জানায়, এবছর এসব বাগান থেকে ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার কেজি সবুজ কাঁচা চা পাতা উত্তোলন করা হয়। যা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাটের চলমান ২২ টি কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে এক কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এই উৎপাদন জাতীয় উৎপাদনের ১৫ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালে এ অঞ্চলে চা আবাদের পরিমাণ ছিলো ১০ হাজার ১৭০ দশমিক ৫৭ একর। উৎপাদন হয়েছিলো এক কোটি তিন লাখ কেজি। সেই তুলনায় গত এক বছরে আবাদ বেড়েছে এক হাজার ২৬৩ দশমিক ৩৭ একর। আর উৎপাদন বেড়েছে ৪২ লাখ ৪০ হাজার কেজি।
চা বোর্ড জানায়, সিলেট অঞ্চলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদন অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পঞ্চগড়। পঞ্চগড়কে অনুসরণ করে চা চাষে এগিয়ে যাচ্ছে পার্শ^বর্তী ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলা। একসময়ের পতিত গো-চারণ ভূমি এখন চায়ের সবুজ পাতায় ভরে উঠছে। আন্তর্জাতিক মানের চা উৎপাদন হওয়ায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এ অঞ্চলের চা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে। চা-বাগানের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে। সৃষ্টি হয়েছে মানুষের কর্মসংস্থান।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম জানান, করোনা পরিস্থিতিতেও দেশের সকল চা বাগানের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিলো। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চা নিলাম কেন্দ্র চালু রাখা, সঠিক সময়ে ভর্তুকি মূল্যে সার বিতরণ, শ্রমিকদের মুজুরি বৃদ্ধি, রেশন এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণের ফলে ২০২১ সালে চা উৎপাদনে এই অর্জন হয়েছে।
তিনি বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতেও উৎপাদনের এ ধারাবাহিকতা থেকে বুঝা যায় যে, যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশের চা শিল্প উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম।
তিনি আরো বলেন, উত্তরবঙ্গে ক্ষুদ্র চা চাষিদের ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলের’ মাধ্যমে চা আবাদ বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহের ফলে সমতলের চা বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান থেকে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।
পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, সমতল ভূমিতে চা চাষের জন্য পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলা অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ১৯৯৬ সালে সর্বপ্রথম পঞ্চগড়ে চা চাষের পরিকল্পপনা হাতে নেয়া হয় এবং ২০০০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ শুরু হয়। দিনদিন এ অঞ্চলে চা চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, চা চাষ সম্প্রসারণে চাষিদের বিভিন্ন সহায়তার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করে স্বল্পমূল্যে উন্নত জাতের চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলের’ মাধ্যমে কর্মশালা হচ্ছে। চাষিদের সমস্যা সমাধানে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ নামে একটি মোবাইল এপস চালু করা হয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ে একটি পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে চাষিদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, রোগবালাই ও পোকা দমনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সহায়তা দেয়া হয়।
শামীম আল মামুন আরো বলেন, এ বছর ক্ষুদ্র চাষিরা কাঁচা পাতার ন্যায্যদাম পাওয়ায় উৎসাহিত হয়েছে। নতুন নতুন চা আবাদীও বাড়ছে। এতে এ অঞ্চলের মানুষের যেমন দারিদ্র্যবিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে তেমনি কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।