আজ পয়লা বৈশাখ। বাঙালির সার্বজনীন আনন্দের দিন। করোনা আতঙ্কের কারণে বাংলা নববর্ষ বেদনাময় এক উৎসবে পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয়বারের মতো বেদনাভারাক্রান্ত পয়লা বৈশাখ উদযাপন করছে বাংলার মানুষ।
বাঙালির মিলনের দিন পয়লা বৈশাখ। তবে দিনটি এবার নিস্তব্ধতায় প্রাণহীন। এক অলঙ্ঘনীয় নির্দেশ এসেছে ‘সামাজিক দূরত্ব’ রক্ষার। মিলনমেলা আর সামাজিক দূরত্ব একেবারেই দুই ভিন্ন ব্যাপার। মিলনমেলার আনন্দের চেয়ে জীবন বাঁচাতে বিষাদময় স্বেচ্ছাবন্দিত্ব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবার একটাই কথা—আগে জীবন। তারপর অন্য কিছু। বিনোদন দুনিয়ার তারকারও একই সুরে কথা বলছেন। তবে তাদের বিশ্বাস, সুদিন আসবেই।
মাহিয়া মাহি
গত বছরের মতো এবারও পয়লা বৈশাখে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই মাহির। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আমরা এক অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছি। এই লড়াইয়ে জিততে হলে আমাদের ঘরে থাকতে হবে, ঘর থেকে বের হওয়া চলবে না। এই নতুন বছরে আমাদের সবার একটাই চাওয়া—সমস্ত জরা জীর্ণতা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাক। আমরা একটা করোনাভাইরাসমুক্ত নতুন পৃথিবী পাব।”
তবে নায়িকা হওয়ার আগের পয়লা বৈশাখকে মিস করেন মাহি। সময়ের খেরো খাতায় রেখে আসা সেই সময়ের পয়লা বৈশাখ পালনের দিনগুলো নাকি বেশি আনন্দের ছিল তার।
নুসরাত ফারিয়া
করোনার কারণে মা–বাবার সঙ্গে বাড়িতেই পান্তা–ইলিশ খেয়ে নতুন বছর শুরু করতে চান নুসরাত ফারিয়া। তিনি বলেন, “আমার পয়লা বৈশাখ দিনটি শুরু হয় ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের মাধ্যমে। সাদা কুর্তি পরি। তারপর আমার বড় বোনসহ পরিবারের সবার সঙ্গে বসে পান্তা-ইলিশ খাই। বিকেলবেলা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে বন্ধুদের বাসায় যাই। বিভিন্ন রকমের বাঙালি খাবার খাই। কিন্তু গত বছর তেমনটা হয়নি। করোনা মহামারির কারণে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করতে পারিনি। তখন আমি আমার পরিবারের সঙ্গে ফার্ম হাউসে ঘরোভাবে বৈশাখ উদযাপন করেছি। এবারও করোনা পরিস্থির কারণে বৈশাখ উদযাপন করা হবে না।”
জরা, শোককে মুছে বাংলা বছর নতুন প্রত্যশা আর উদ্দীপনা নিয়ে শুরু হয়। এ বছর তো উদ্দীপনা আর আশার কথা খুব প্রয়োজন। তাই ফারিয়ার কাছে জানতে চাই তার প্রত্যশার কথা। তিনি বলেন, “বছরের প্রথম দিন একটা কালবৈশাখী এসে করোনাভাইরাসকে পৃথিবীকে থেকে ধুয়ে–মুছে নিয়ে যাক— এবারের নতুন বছরের প্রথম দিন এটাই প্রত্যাশা করছি।”
সাফা কবির
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বেশ চিন্তিত ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাফা কবির। তিনি বলেন, “পয়লা বৈশাখের দিন রমজান ও লকডাউন। ফলে পয়লা বৈশাখ উদযাপন সেভাবে হচ্ছে না। প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এ রকম অবস্থায় ব্যক্তিগতভাবে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের কোনো ইচ্ছা নেই। গত বছর বন্ধুদের সঙ্গে কাটিয়েছিলাম। ভিডিও কলে আড্ডা হয়েছিল। এবার সে ইচ্ছা হচ্ছে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আমি এত বেশি চিন্তিত যে, কোনো কিছু করার সায় দিচ্ছে না মন। তবে একটা চাওয়া—নিজেকে নিরাপদ রাখার পাশাপাশি অন্যদেরও নিরাপদ রাখব।”
তারকাদের প্রত্যাশা পূরণ হোক। করোনা চলে যাক। গ্লানি মুছে যাক ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলজুড়ে। তখন না হয় সুস্থ-স্বাভাবিক পৃথিবীতে নববর্ষ উদযাপন করা যাবে দ্বিগুণ আনন্দে। তত দিন পর্যন্ত কেবল সুদিনের অপেক্ষা।