‘উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস নয়’

সুব্রত চন্দ প্রকাশিত: মে ৮, ২০২১, ০৯:১৩ পিএম ‘উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস নয়’

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটার প্রতিবাদ জানিয়েছে কবি, সাহিত্যিক, সংগঠক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। গত এক সপ্তাহ ধরে কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, কেউ সশরীরে উপস্থিত হয়ে নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছেন। কেউই চান না উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস হোক।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটার বিষয়ে আমার প্রবল আপত্তি আছে। এই গাছগুলো না কেটে কাজটা অন্যভাবে করা যেতো। কিন্তু তা না করে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে।”

কবি ও সংগঠক রহমান মফিজ বলেন, ‍“মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা স্মৃতি সংরক্ষণ করা অবশ্যই উচিত। কিন্তু যারা এই প্রকল্পগুলোর নকশা করে তারা মানুষের পাশাপাশি প্রকৃতিরও যে বাঁচার অধিকার আছে, প্রকৃতির নানা উপাদানগুলোর যে সুরক্ষার প্রয়োজন আছে, এগুলো ঘুণাক্ষরেও ভাবেন না। যদি ভাবতেন তাহলে গাছগুলো তারা কাটতেন না। গাছ রেখেই তারা ভাবতেন কীভাবে স্মৃতি সংরক্ষণ করতে পারে, কীভাবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো করতে পারে। গাছগুলো রেখেই এগুলো ভাবা যায়।”

রহমান মফিজ আরো বলেন, “সরকারি আমলারা আসলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠে না। তারা থাকে সারাক্ষণ ফাইল-পত্রের মধ্যে। ইট-কনক্রিটের বিল্ডিংয়ের ভেতর বড় হয়। প্রকৃতিকে বোঝার মতো বোধ তাদের নেই। তা না হলে এই ধরনের কাজ কীভাবে করে। একেকটা গাছ ৫০-৬০ বছরের। পার্কের মানুষের সঙ্গে এই গাছগুলো বড় হচ্ছে। তাদের আলাদা ভাষা আছে। এগুলো বোঝার মতো মানসিকতা তাদের নেই।”

এই প্রকল্প কে চেয়েছে প্রশ্ন করে তিনি আরো বলেন, “মানুষ কি চেয়েছে এখানে রেস্টুরেন্ট হোক? ওরা নিজ তাগিদে, নিজ গরজে গাছ কাটছে। মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করেছে এখানে রেস্টুরেন্ট লাগবে কীনা?”

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, “সরকার এসব উন্নয়নের নামে সবসময় প্রকৃতি ধ্বংস করছে। আমরা এর আগে দেখেছি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সময় সেখানে সুন্দরবন ধ্বংস করা হচ্ছে। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সময়ও একই ঘটনা ঘটেছে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সবসময় গাছ কাটা হয়। মেট্রোরেলের প্রকল্পের জন্যও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অপ্রয়োজনে অনেকগুলো গাছ কাটা হয়েছে। ঠিক একই ধারাবাহিকতায় সরকার তার স্বৈরাচারী আচরণ বজায় রেখেছে।”

ফয়েজ উল্লাহ বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঢাকা শহরের ফুসফুস বলা হয়। সেটাও আজকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ কীভাবে এই শহরে বেঁচে থাকবে, ঢাকার পরিবেশ যে কেমন হবে— তা চিন্তা না করেই সরকার অপরিকল্পিতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা একটা জঘন্যতম কাজ।”

এই ছাত্র নেতা আরো বলেন, “মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এই করোনাকালে আমরা সেটা দেখেছি। যেখানে আরো বেশি গাছ লাগানো প্রয়োজন, সেখানে সরকার উল্টো গাছ কাটছে। আমরা মনে করি সকলের নিজ নিজ জায়গা থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা প্রয়োজন এবং সরকারের অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত।”

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন বলেন, “ঢাকা শহরে আমাদের এমনিতে গাছপালার ব্যাপক সংকট। মানুষের কোথাও বসার জায়গা নেই, প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা নেই। সেখানে সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক স্থানকে কীভাবে আরো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত করবে সেটা না করে, বরং তথাকথিত উন্নয়নের নামে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নষ্ট করছে। এটা নষ্ট করার অধিকার সরকারের নেই। এটা জনগণের সম্পত্তি।

আরও সংবাদ