|| আলহাজ্ব মো. আব্দুর রাজ্জাক
কৃষক যখন তার জমিনের ফসল বুনে, ফসলের সঙ্গে আগাছাও জন্মে। ভালো ফসল প্রাপ্তির আশায় সে আগাছাগুলোকে নিড়ানি দ্বারা উপড়ে পরিষ্কার করে দেয় এবং ভালো ফসল ঘরে তোলে।
মানবজমিন থেকেও ভালো ফসল উৎপন্ন করা সম্ভব যদি আগাছা পরিষ্কার করে নেয়া যায়। সেটা কি? সেটা হল ষড়রিপু। কাম = sex passion, ক্রোধ = anger, লোভ = greed, মোহ = infatuation = পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, মদ্ = vanity = অহংকার, মাৎসর্য = envy = হিংসা, ঘৃণা, পরশ্রীকাতরতা। এই ষড়রিপুর সম্মিলিত যে রূপটি মানব চিত্ত ধারণ করে তাই হলো শয়তান (All these six inherent cardinal passion collectively called Satan in Human being.)। স্রষ্টা এবং তাঁর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি মানবের চিরন্তন শত্রু হলো এই শয়তান। এইগুলি মানবজীবনের আগাছা। এগুলি ছেঁটে ফেলা যাবে না কিন্তু দমন করা যাবে। তাহলেই প্রচুর ফসল আবাদ করা সম্ভব।
কবি বলেছেন -
এমন মানব জমিন রইল পতিত
আবাদ করলে ফলতো সোনা
মনরে কৃষিকাজ জানো না।
আপনি তথা কৃষক যদি মনে করে এই ছয় পশু আসামের জঙ্গল থেকে এসে জমিনের বেড়া ভেঙ্গে ফসল দলিত মথিত করে পুনঃ আসামে ফিরে গেছে তাহলে হিসাব ভুল হল। এরা কৃষকেরই দেহ-মনে অন্তরে আত্মায় কলবে বসতি স্থাপন করে বসবাস করিতেছে এবং যথারীতি কৃষককে তথা আপনাকে বরবাদ করে যাচ্ছে অতএব আপনার বন্দেগী এবাদত কোন কাজে আসছে না।
তাইতো কবি বলেন,
জমিদারের কথামতো দেয়না জমি চাষ
তাইত ফসল ফলে নারে দুঃখ বারো মাস।
মাটি দ্বারা আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করে আল্লাহ তার মুখ দিয়ে রুহু ফুকে দিলেন, আদম নড়েচড়ে বসল। আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে আদেশ করলেন, আদমকে সেজদা করো। সকল ফেরেশতারা সিজদা করল কিন্তু আজাজিল করল না, সে অহংকার করল এবং আল্লাহ তাকে বিতারিত শয়তান বলে লানত করলেন। তখন সে আল্লাহর কাছে অবকাশ চাইলো এবং আল্লাহ তাকে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিলেন। তখন সে বলল, আমি তোমার আদম সন্তানদেরকে বরবাদ করে ছাড়বো। আল্লাহ বললেন, আমার বান্দা যখন হৃষ্টচিত্তে ক্ষমা চাইবে, তৎক্ষণাৎ সব মাফ করে দিব। শয়তান বলল, তাহলে তোমার আদম সন্তানদের লোমকূপ দিয়ে ঢুকতে ও বাহির হওয়ার ক্ষমতা দাও। আল্লাহ বললেন, যাও দিলাম।
এভাবে শয়তান মানুষের অন্তরে শরোরিপু রূপে বসবাস করে আসছে আর মানুষকে প্রতিনিয়ত বিপদগামি করিতেছে। শয়তানকে আটকাতে পারলেই আপনার ইবাদত পূর্ণতা প্রাপ্ত হবে। কাজটা কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। নিজের বিশ্বাসকে দৃঢ় করে ফেলুন আর শয়তানকে আটক করে চুটিয়ে ফসল কেটে নিন।
লেখক : সাবেক প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ।