কোভিড-১৯

নতুন উপসর্গ— পেশী ও গিঁটে গিঁটে তীব্র ব্যথা

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ৪, ২০২০, ০৯:০৫ পিএম নতুন উপসর্গ— পেশী ও গিঁটে গিঁটে তীব্র ব্যথা
প্রতীকী ছবি

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ে চরম আতঙ্কিত বিশ্ব। সাধারণত কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা ও শাসকষ্টের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ। সাধারণ এসব লক্ষণের পাশাপাশি নিত্যনতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।

ভাইরাসটি প্রতিনিয়ত নিজেকে পরিবর্তন করায় উপসর্গেও পরিবর্তন ঘটছে। এবার আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন জানাচ্ছে, কোভিড-১৯-এর উপসর্গের তালিকার ঢুকে গেছে পেশী ও গিঁটে গিঁটে ব্যথা।সবারই যে সমস্যাটি হয়, এমন নয়। তবে ১৪.৮ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই এটা ঘটতে পারে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।

কোভিড-১৯ উপসর্গ হিসেবে এই ব্যথাকে এত গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় বলেই ভাবা হয়েছিল প্রথমে। সম্প্রতি ভুল প্রমাণিত হল সেই ধারণা। বিভিন্ন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেলেন, কিছু ক্ষেত্রে অন্তত রোগীর অবস্থা কতটা জটিল হবে তা নির্ধারণ করে দেয় এই উপসর্গটি। যত মারাত্মক হয় ব্যথার প্রকোপ, তত আশঙ্কা বাড়ে ফুসফুসের জটিলতম সমস্যা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম বা এআরডিএসের।

জ্বর থাকে ৮৭.৯ শতাংশ কোভিড রোগীর, শুকনো কাশি থাকে ৬৭.৭ শতাংশের, ক্লান্তি ৩৮.১ শতাংশের, শ্বাসকষ্ট ১৮.৬ শতাংশের, পেশী ও গিঁটে ব্যথা (মায়ালজিয়া ও আর্থ্রালজিয়া) থাকে ১৪.৮ শতাংশ রোগীর৷

চীনের ৫৫ হাজার ৯২৪ জন রোগীর উপর সমীক্ষা চালিয়ে উপসর্গের এই ক্রম তৈরি করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তালিকার আরও নিচে আছে গলা ব্যথা ১৩.৯ শতাংশ, মাথা ব্যথা ১৩.৬ শতাংশ, কাঁপুনি ১১.৪ শতাংশ ইত্যাদি।

কিছু কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে পূর্বাভাস বয়ে আনলেও, পেশী ও গিঁটে গিঁটে ব্যথা মানেই কিন্তু কোভিড-১৯ নয়। বিশেষ করে এই ঋতু পরিবর্তনের সময়, যখন সাধারণ জ্বর-সর্দি, ফ্লু হচ্ছে বহু মানুষের। আর তার সঙ্গী হিসেবে প্রায় সবারই থাকছে কমবেশি পেশী ও গিঁটে ব্যথা। তবে কোভিডের সঙ্গেও এই ব্যথা কমবেশি থাকছে। বেশিরভাগ সময় তা এত মৃদুভাবে যে মানুষ বুঝছেনই না সাধারণ জ্বর-কাশি হল, না কি কোভিড-১৯।

কখন বিপদ?

ভারতের ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সৌতিক পান্ডা জানিয়েছেন, যদি দেখেন ব্যায়াম-ট্যায়াম কিছু না করা সত্ত্বেও গায়ে-হাত-পায়ে-কোমরে ঠিক ভারী ব্যায়াম করার পর যেমন টাটানো ব্যথা হয়, তেমন হচ্ছে তা ভয়ের। একদিন বা দু’দিন পার হওয়ার পরও তা কমার কোনও লক্ষণ যদি না থাকে, সঙ্গে কোভিডের অন্যান্য উপসর্গ যদি দেখা দেয় তবে তা ভাবনার। তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ব্যথা না কমলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন। টাটানো ব্যথা আগে হবে, জ্বর-কাশি পরে হবে— এমন কোনও নিয়ম কিন্তু নেই। একসঙ্গেও আসতে পারে সব। উপসর্গ দেখে চিকিৎসকের যদি সন্দেহ হয়, তিনি কোভিডের পরীক্ষা করাবেন।

গিঁটে গিঁটে ব্যথা কেন হয়?

ভাইরাস সংক্রমণ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে যখন ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই শুরু করে, তখন সারা শরীরজুড়ে বাড়ে প্রদাহের প্রবণতা। পেশীতে প্রদাহ হলে পেশীতে ব্যথা হয়, লিভারে হলে লিভার এনজাইম এসজিপিটি বাড়ে। ফুসফুসে হলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেনের ঘাটতি হতে শুরু করে। লাল রক্তকণা বা হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমেই যেহেতু কোষে কোষে অক্সিজেন যায়, তার সংখ্যা বেড়ে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা হয়। অর্থাৎ এই তিনটি উপসর্গ থাকা মানে শরীরে বড়সড় ক্ষতি হতে চলেছে বা এরই মধ্যেই হয়ে গেছে।

সারা রাত সরাসরি ফ্যানের নিচে বা এসিতে শুয়ে থাকলেও অনেক সময় হয় এমন সমস্যা হতে পারে। সঙ্গে হালকা জ্বরও আসতে পারে। তাতে ভাবার কিছু নেই, বিপদ আসলে তখন, যখন ব্যথার চোটে অস্থির হয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে ব্যথার পরিমাণ একই রকম থেকে যাবে তিন দিন পর্যন্ত।

নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিছেন, যত মারাত্মক পেশীর ব্যথা হবে, তত বেশি আশঙ্কা ফুসফুসের ক্ষতির। আনন্দবাজার।

এসএমএম

আরও সংবাদ