মৃত্যুহার কমলেও, কমছে না মাতৃস্বাস্থ্যের নানা ঝুঁকি। প্রসবকালীন, প্রসব-পরবর্তী সময়ে নানা জটিলতায় পড়তে হয় নারীদের। স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রসব সমস্যায় ১৪ জন মায়ের মৃত্যু হয়। কারণ নানা জটিলতা, অসতর্কতা।
মাতৃকালীন সমস্যাগুলো মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। মাতৃস্বাস্থ্যসেবার মান বেড়েছে, তবে দেশে মাত্র ৫৫ শতাংশ মা নিরাপদ মাতৃত্ব সুবিধা পাচ্ছেন। গর্ভকালীন শতকরা ১৪ জন নারী নানা ঝুঁকিপূর্ণ জটিলতায় ভোগেন, যা মাতৃমৃত্যুর জন্য দায়ী। তথ্যমতে, শতকরা ৫১ ভাগ গর্ভবতীর মৃত্যুই রক্তক্ষরণ ও খিচুনির কারণে হয়।
মাতৃস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ার কারণগুলো মধ্যে দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা দানকারীর অনুপস্থিতি এবং প্রয়োজনীয় যত্নের অভাবও দায়ী। পরিবার এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে পারে।
অসচেতনতা, অবহেলা, প্রসব-পরবর্তী সেবার দূরদর্শিতায় অভাবে একজন মা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। দেশে মাত্র শতকরা ৬৮ ভাগ গর্ভবতী নারীরা ১টি প্রসবপূর্ব সেবা এবং ২৬ ভাগ নারী ৪টি প্রসবপূর্ব সেবা গ্রহণ করেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে, যা নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য উদ্বেগজনক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সিজার হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ। কিন্তু দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে এই হার ৩০ শতাংশ। এছাড়া বিশ্বে শতকরা ১০ জন গর্ভবতী নারী এবং শতকরা ১৩ জন মা সন্তান প্রসবের পর কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। মূলত হতাশা ও বিষণ্ণতায় ভোগেন তারা। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর হার আরও বেশি, প্রায় শতকরা ২০ জন।
মায়েদের এই বিষণ্ণতাকে পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন বলা হয়। এছাড়া মায়েদের পোস্ট পারটাম সাইকোসিসও হয়ে থাকে, তবে এর প্রবণতা খুব কম। যদিও এর হার কম।
যথাসময়ে এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিজ্ঞানীর চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। না হলে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
অসংখ্য পরিবার মাতৃকালীন নিরাপত্তার বিষয়ে এখনো অজ্ঞ। নানা বিভ্রান্তি ও কুসংস্কার এখনো তাদের আঁকড়ে রেখেছে। সঠিক চিকিৎসাসেবা নিতে আগ্রহী হয় না তারা। আবার কর্মজীবী মায়েদের ক্ষেত্রেও নিরাপদ মাতৃত্বের বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, মেয়েদের কমপক্ষে ৬ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে নারীরা এই সুযোগ পান না। এতেও তাদের ঝুঁকি মধ্যে পড়তে হয়।
মাতৃকালীন নারীদের মারাত্মক জটিলতার শিকার হলে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। প্রাথমিক অবস্থায় এগুলো শনাক্ত করতে পরিবারে নজর রাখতে হবে। মারাত্মক লক্ষণগুলোর মধ্য রয়েছে- হাত-পা ফুলে যাওয়া, অত্যধিক বমি হওয়া, প্রসবের আগে রক্তক্ষরণ বা পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, তীব্র মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, তীব্র জ্বর, ঘণ্টার বেশি সময় ধরে প্রসব ব্যথা, দুর্গন্ধযুক্ত কোনো স্রাব, খিঁচুনি, প্রসবপথে গর্ভস্থ শিশুর মাথার পরিবর্তে অন্য কোনো অংশ দেখা দেওয়া। এ ধরনের যেকোনো সমস্যা দেখা দিলেই দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা নিতে হবে।