গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে নানান পরিবর্তন আসে। এতে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হয়। যেমন ঠিকমতো চলতে না পারা, খেতে না পারা, ঘুমাতে না পারা। কিন্তু এর সবই স্বাভাবিকভাবে না হলে গর্ভবতীসহ নবজাতকের শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়ে। গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক নারীর সঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমও অত্যন্ত প্রয়োজন, যা মা এবং গর্ভস্থ শিশুকে ভালো রাখবে।
স্বাস্থ্যবিদদের মতে, গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস, শরীর থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন নির্গত হয়। এতে সারা দিন ঘুমঘুম ভাব এবং অসম্ভব ক্লান্তি অনুভব হতে পারে। কিন্তু রাতে সঠিকভাবে ঘুম হয় না। দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাসের পর গর্ভবতী নারীদের দেহের পরিবর্তনগুলো আরও বাড়তে শুরু করে। পেট বড় হওয়া, ত্বকে চুলকানি, ক্র্যাম্পস, ব্যাক পেইন এমনকি স্ট্রেসও বেড়ে যায। এগুলো থেকে ঘুমের সমস্যাও বাড়ে। তাই গর্ভাবস্থায় ঘুম ঠিক রাখতে বাড়তি নজর ও যত্ন নিতে হবে।
কাজ রেখে ঘুমিয়ে নিন
গর্ভাবস্থায় যখনই ঘুম পাবে আগে ঘুমিয়ে নিন। কারণ এই সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় ঘুম পাওয়া এবং অসম্ভব ক্লান্তি বোধ হওয়া খুব স্বাভাবিক। শরীর কী চাইছে, তা বুঝে নিন। ঘুমের সময়ের পরিবর্তন হতে পারে। যখনই ঘুম পাবে, তখনই ঘুমিয়ে নিন।
চা-কফি এড়িয়ে চলুন
দুপুরের খাবারের পর চা বা কফি পান এড়িয়ে চলুন। ক্যাফিন হলো এক ধরনের উত্তেজক, যা আপনার ঘুমের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কফি বা চা পানে সারারাত জেগে থাকার মতো অবস্থাও হতে পারে। ওই সময় আপনার বাচ্চাও গর্ভে জেগে থাকতে পারে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
কিছুক্ষণ রোদে বসুন
দিনে সূর্যের আলোয় কিছুক্ষণ বসে থাকুন। এটা শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয়। এতে শরীর ভিটামিন ডি পাবে। শরীরের ভেতরের অংশগুলো সঠিকভাবে কাজ করবে। গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ রোদ না পেলে শরীর ঘুমের সংকেত পেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। চিকিৎসকরা জানান, গর্ভাবস্থায় দিনে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রোদে থাকার জরুরি।
ঘরের আলো কম রাখুন
রাতে ভালো ঘুমের জন্য় ঘরের আলো কমিয়ে রাখুন। অন্ধকার ঘরে ঘুমানোর অভ্যাস করা সবচেয়ে ভালো। রাতে নীল আলোর সংস্পর্শে এলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবেই। এটি মেলাটোনিন নিঃসরণে বাধা দিতে পারে, যা ঘুমোতে সহায়তা করে। তাই শয়নকক্ষের সব আলো রাতে বন্ধ রাখুন। এছাড়া ডিজিটাল ঘড়ি বা ইলেকট্রনিকস কোনো জিনিস জ্বলতে থাকলে সেগুলোও বন্ধ রাখুন।
ইলেকট্রনিকস জিনিস দূরে রাখুন
ঘুমের সময় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেটের মতো ইলেকট্রনিকস জিনিসগুলো দূরে রাখুন। এর থেকে ব্লু লাইট নির্গত হয়। যা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই ঘুমের আগে যেকোনও ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। বিছানা থেকে দূরে রাখুন।
মাথা উঁচুর দিকে রাখুন
ঘুমের সময় মাথা উঁচু করে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। এতে ঘুমের মধ্যে আঁসফাঁস লাগবে না। শ্বাসকষ্টেরও সম্ভাবনা কমে যাবে।
পাশ ফিরে ঘুমান
গর্ভাবস্থায় কখনোই সোজা হয়ে ঘুমাবেন না। একপাশ হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো পাশে ঘুমাতে পারেন। পিঠের নিচে ও হাঁটুতে সাপোর্ট দিয়ে নিতে পারেন। বাজারে মেটারনিটি পিলো পাওয়া যায়। তা ব্যবহার করুন।
অ্যারোমাথেরাপি বা সুগন্ধি
গর্ভাবস্থায় ঘুম ভালো হতে পারে অ্যারোমাথেরাপিতে। সুগন্ধযুক্ত মোমবাতি বা অ্যাসেনশিয়াল অয়েলসহ অ্যারোমা থেরাপি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। এটি মন ও শরীরকে শান্ত রাখে। ল্যাভেন্ডার অ্যাসেনশিয়াল অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন।
ভারী খাবার খাবেন না
রাতে ঘুমানোর আগে কখনোই ভারী খাবার খাবেন না। হালকা, হজমযোগ্য কিছু খাবার খাবেন। এতে ঘুম ভালো হবে। অস্থির অনুভূতিও কমে যাবে।
হালকা শরীরচর্চা করুন
দিনের সময়টা টুকটাক কাজ করুন। একাধারে বসে বা শুয়ে কাটাবেন না। গর্ভাবস্থায় দিনের সময় হালকা এক্সারসাইজ করা ভালো। যা ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। এছাড়াও সাঁতার কাটা, হাঁটা অথবা যোগব্যয়াম করা যেতে পারে। যা আপনাকে ফিট ও অ্যাকটিভ রাখবে। তবে ঘুমানোর কমপক্ষে তিন ঘণ্টা আগেই শরীরচর্চার পর্ব সেরে নিন।