এশিয়ার পরাশক্তি চীন ও উত্তর ইউরেশিয়ার সর্ববৃহৎ দেশ রাশিয়াকে নিয়ে নতুন একটি পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার (২ আগস্ট) হোয়াইট হাউসে উপস্থিত সাংবাদিকদের পরিকল্পনাটি নিয়ে শক্তিশালী এই দেশ দুটির সঙ্গে এক বিস্তর আলোচনার বিষয়ে নিজের আগ্রহের কথা জানান তিনি।
যেখানে উভয় দেশই বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে নিজেদের উৎসাহ দেখিয়েছে বলেও দাবি ট্রাম্পের। মূলত স্নায়ুযুদ্ধের যুগে রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি পারমাণবিক চুক্তি বাতিলের পর নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার শঙ্কা থেকে এই পরিকল্পনার কথা জানালেন মার্কিন এ প্রেসিডেন্ট।
এর আগে একই দিন রাশিয়ার সঙ্গে ১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত 'দ্য ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি' (আইএনএফ) নামে পারমাণবিক চুক্তিটি বাতিল করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ও সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের শাসনামলে স্বাক্ষরিত সেই চুক্তিটির আওতায় সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল
সম্প্রতি রুশদের বিরুদ্ধে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের মাধ্যমে এই চুক্তি লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ এনে চুক্তিটি বাতিল করেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট কট্টর ডানপন্থি নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও শুরু থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া।
এ দিকে চুক্তি বাতিলের পর বিশ্বজুড়ে নতুন পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা কীভাবে প্রতিরোধ করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, 'আমার প্রশাসন রাশিয়ার সঙ্গে নতুন পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করছি। যাতে করে এসব ক্ষেত্রে তারাও কিছুটা ছাড় পায় এবং আমরাও যেন কিছু সুবিধা নিরে পারি। যদিও চুক্তির কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের চীনকেও যুক্ত করতে হবে।'
হোয়াইট হাউসে উপস্থিত সাংবাদিকদের খুব শিগগিরই নতুন চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, 'এটি গোটা বিশ্বের জন্য একটি বড় ঘটনা হবে। যা উদাহরণ হয়ে যুগের পর যুগ ধরে থেকে যাবে। এ নিয়ে চীন আমাদের সঙ্গে আলোচনায় ভীষণ উৎসাহ দেখিয়েছে আর রাশিয়ার মনোভাবও ঠিক একই। যে কারণে আমার বিশ্বাস, খুব শিগগিরই আমরা চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে পারব।'
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সামরিক জোট 'ন্যাটো' রাশিয়ার বিরুদ্ধে 'আইএনএফ' নামক চুক্তিটি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। তখন ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, তাদের কাছে যথাযথ প্রমাণ রয়েছে যে, রাশিয়া নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে 'এসএসসি-৮' নামের পরিচিত '৯এম৭২৯' মডেলের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। পরবর্তীতে অভিযোগটি ন্যাটোর কাছে তুলে ধরলে তারাও মার্কিন দাবির পক্ষে নিজেদের অবস্থান নেয়। যদিও শুরু থেকেই ক্রেমলিন এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে আসছে।
অপর দিকে গত শুক্রবার এই একই ইস্যুতে কথা বলেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তার মতে, 'চুক্তিটি ভেস্তে যাওয়ার জন্য এককভাবে রাশিয়াই দায়ী। তাই তাদেরই নতুন করে এর সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।'
বিশ্লেষকদের মতে, সম্প্রতি ন্যাটো মিত্রদের পূর্ণ সমর্থনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত হরতে সক্ষম হয়েছে যে- চুক্তির শর্ত ভঙ্গের জন্য একমাত্র রাশিয়াই দায়ী। যে কারণে চুক্তির শর্ত মানতে যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো দায়বদ্ধতা নেই। মূলত এরপরই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাঠানো বিবৃতির বরাতে দেশটির বার্তা সংস্থা 'রিয়া নভোস্তি' জানায়, রাশিয়ার সঙ্গে ১৯৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাক্ষরিত 'দ্য ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি' (আইএনএফ) নামে পারমাণবিক চুক্তিটির 'আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত' হয়েছে।
যদিও এই দুই পরাশক্তির চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাস উভয় রাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছেন, 'এবার পারমাণবিক যুদ্ধ বন্ধের এক অমূল্য সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি আরও বৃদ্ধি পাবে।'
যে কারণে বৈশ্বিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের কথা বিবেচনা করে আবারও এমন একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য নতুন একটি সাধারণ পথ তৈরিতে সকল পক্ষকে প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘ এই মহাসচিব।
এসকে