জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতার

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০১৯, ০৯:৪৫ পিএম জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতার

জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পর এবং রাজ্যসভায় ৩৫এ ধারা বাতিল পাশ হওয়ার পর গ্রেফতার করা হয়েছে পিডিপি নেত্রী তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে। গ্রেফতার করা হয়েছে ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাকেও।

ভারতীয় সময় রাত ৯টার কিছুক্ষণ আগে নিরাপত্তা বাহিনীর দুটি দল তাদের দুজনকে নিজ নিজ বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। এছাড়া বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সাজ্জাত লোনকেও গ্রেফতার করল পুলিশ। মেহবুবাকে শ্রীনগরের বাসভবন থেকে কিছুটা দূরের একটি সরকারি গেস্ট হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

রোববার (৪ আগস্ট) রাত থেকে রাজ্যের তিন মুখ্য রাজনীতিবিদ মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লা এবং সাজাদ লোনকে তাদের বাড়িতে নজরবন্দি করে রাখা হয়। তাদের সঙ্গে কাওকে দেখা করতে দেয়া হয়নি।

সোমবার সংসদে একথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রস্তাব করেন, এখন থেকে জম্মু ও কাশ্মীর আর রাজ্য থাকবে না। তাকে ‘পুনর্গঠিত' করা হবে। এই রাজ্যে দু'টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থাকবে। জম্মু ও কাশ্মীর যার আইনসভা থাকবে এবং লাদাখ যার আইনসভা থাকবে না। দু'জন লেফটেন্যান্ট গভর্নর থাকবেন। রাতে এই প্রস্তাবই পাশ হয়েছে রাজ্যসভায়।

জম্মু কাশ্মীর নিয়ে সিদ্ধান্তের জেরে এদিন সকাল থেকেই লোকসভা ছিল সরগরম। কংগ্রেস, তৃণমূল সহ বিরোধীরা এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করলেও, বিজেপি বিরোধী দুই দল আপ ও বসপা সকলকে চমকে দিয়ে সরকারকে সমর্থন করে। সমর্থন জানায় বিজেডির মত দলও। উল্টোদিকে বিহারে বিজেপি সঙ্গী জেডি ইউ এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে।

মেহবুবা মুফতি এদিন টুইট করে বলেছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ীর অভাব অনুভব করছেন তিনি। দিনব্যাপি মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লা টুইটারে ভারত সরকার ও ৩৭০ ধারা রদ নিয়ে একের পর টুইট করা শুরু করেন।

সরকারের উদ্দেশ্যকে ‘অশুভ’ বলে বর্ণনা করে রোববার রাত থেকে নজরবন্দি থাকা মেহবুবা জানালেন, সরকার চায় জম্মু ও কাশ্মীরের জনতত্ত্বই বদলে দিতে। মেহবুবা জানান, ‘‘ভারতীয় গণতন্ত্রের আজ সবচেয়ে কালো দিন। ১৯৪৭ সালে ২ দেশের তত্ত্ব নাকচ করা ও ভারতের সঙ্গে থাকার জম্মু ও কাশ্মীরের নেতৃত্বে সিদ্ধান্তরই ফল এটা।” আরেকটি টুইটে মেহবুবা বলেন, ‘‘নিশ্চিত নই কবে আমি যোগাযোগ করতে পারব। এই ভারতকেই কি আমাদের মেনে নিতে হবে?”

গ্রেফতারের নির্দেশিকা

বিজেপির সঙ্গে জোট করে এক সময় জম্মু-কাশ্মীরে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মেহবুবা। কিন্তু গত বছর জুনে সেই জোট ভেঙে যায়। পতন হয় সরকারের। গত সপ্তাহে কেন্দ্রের তরফে কাশ্মীরে সেনা সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগের পর থেকে উপত্যকার রাজ্যনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন পিডিপি নেত্রী। উপত্যকার বিরোধী দলগুলিকে একত্রিত করতে মুল ভুমিকা নেন তিনি। মূলত মেহবুবার উদ্যোগে রবিবার ফারুক আবদুল্লার শ্রীনগরের বাসভবনে বৈঠকে বসেছিল কাশ্মীরের দলগুলি।

অপরদিকে সরকারের সিদ্ধান্তকে জনগণের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে উল্লেখ করেন ওমর আবদুল্লা। তিনি। পাশাপাশি তিনি একথাও বলেন যে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আসলে সরকারের ‘আগ্রাসন’ নীতিরই প্রতিফলন বোঝা যায়। “১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ ভারতের উপর যে আস্থা রেখেছিল, ভারত সরকার এই একতরফা এবম অত্যন্ত খারাপ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁদের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সিদ্ধান্তগুলির পরিণতি সুদূরপ্রসারী এবং বিপজ্জনক। রোববার (৪ আগস্ট) শ্রীনগরে সর্বদলীয় বৈঠক করে যেভাবে সকলকে সতর্ক করে দেওয়া হয়, তা রাজ্যের মানুষের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের আগ্রাসনেরই নমুনা”, বিবৃতি দেন ওমর আবদুল্লা।

সূত্র : এনডিটিভি

এসজেড

 

আরও সংবাদ