ভয়াবহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু সম্পর্কে জনস হোপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় বা ওয়ার্ল্ডমিটার আমাদের যে পরিসংখ্যান দেয় আমরা সেটাকেই প্রকৃত হিসাব বলে ধরে নেই। তাদের প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য থেকে জানা যায়, এই মুহূর্তে বিশ্বের ২৩ লাখ ৩২ হাজার ৪০২ জন মানুষ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের দাবি, করোনায় আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও বহুগুণ বেশি।
তারা বলছে, বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কম করে হলেও সাড়ে ১১ কোটি।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন, অনেকের দেহে ভাইরাস সংক্রমিত হলেও তার কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। ফলে তিনি অসুস্থ হননি। তাই তিনি হাসপাতালেও যাননি। পরীক্ষা না করার কারণে করোনায় আক্রান্তের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভূক্ত হয়নি।
তবে স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের এই গবেষণাপত্র শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) প্রকাশিত হলেও তা এখনও বিশেষজ্ঞদের দ্বারা মূল্যায়িত হয়নি।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারা কাউন্টির ৩ হাজার ৩৩০ ব্যক্তির ওপর পরীক্ষা চালিয়ে ওই গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আমাদের জানার চেয়ে ৫০ থেকে ৮৫ গুণ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ক্যালিফোর্নিয়াতেই। ওই অঙ্গরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে সান্তা ক্লারায় সরকারি হিসাবে আক্রান্ত ১ হাজার ৮৭০ এবং মারা গেছেন ৭৩ জন । তবে এই গবেষণাটি যখন চালানো হয় তখন সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজারের মতো। তখন মৃতরে সংখ্যা ছিলো মাত্র ৫০ জন।
স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের দাবি, সান্তা ক্লারায় আসলে ৪৮ হাজার থেকে ৮১ হাজার মানুষের দেহে নতুন এই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে। এই সংখ্যা সেখানে করোনায় আক্রান্ত সরকারি হিসাবের চাইতে বহুগুণ বেশি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আক্রান্ত ব্যক্তি তাহলে সুস্থ রয়েছেন কীভাবে, বা তারা এখনও অসুস্থ হননি কেন?
এই প্রশ্নের জবাবে গবেষকরা জানান, মানবদেহের প্রাকৃতিক সুরক্ষাব্যবস্থা অ্যান্টিবডির কারণেই এত বিপুল সংখ্যক মানুসের মধ্যে এখনও করোনার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে পরীক্ষার মাধ্যমেই বিপুলসংখ্যক মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার দাবি করছেন ওই মার্কিন গবেষকরা।
যে কোনো রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা মানুষের দেহে সবসময়ই কার্যকর রয়েছে। মানুষের শরীরে যখন বাইরে থেকে অচেনা কিছু প্রবেশ করে, শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা যদি তাকে ক্ষতিকর সন্দেহ করে, তখন তা ঠেকাতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সেই অ্যান্টিবডি তখন নির্দিষ্ট ওই জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে। এই লড়াইয়ে জীবাণু জিতলে মানুষ অসুস্থ হয়। আর মানুষ জিতে গেলে সুস্থ থাকে।
এই অ্যান্টিবডি তৈরি হয় বলেই প্রতিনিয়ত নানা রোগ-জীবাণুর মধ্যে থেকেও মানুষ অসুস্থ না হয়ে সচল থাকে। তবে যার প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়, তিনি অসুস্থ হন।
স্টানফোর্ডের এ গবেষক দল সান্তা ক্লারার বাসিন্দাদের মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পরীক্ষা করে রোগীর সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি বক্তির মধ্যে তা দেখতে পেয়েছেন। অর্থাৎ কোনো না কোনো পর্যায়ে তাদের দেহেও ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছিল, কিন্তু সুবিধা করে উঠতে পারেনি বলে তাদের হাসপাতালে যেতে হয়নি।
এর ভিত্তিতে তারা বলছেন, নতুন করোনাভাইরাস (সার্স সিওভি-২) সার্স কিংবা মার্সের চেয়ে ভয়ানক অবস্থা তৈরি করলেও যে মাত্রায় ভয়ঙ্কর বলা হচ্ছে, আসলে ততটা না। দ্য গার্ডিয়ান
এসকে