এখন পর্যন্ত ১১টি টাইপ শনাক্ত

ভোল পাল্টে করোনার হানা, রূপ চেনাচ্ছেন দুই বাঙালি

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২০, ১২:২৭ পিএম ভোল পাল্টে করোনার হানা, রূপ চেনাচ্ছেন দুই বাঙালি
পার্থপ্রতিম মজুমদার ও নিধানকুমার বিশ্বাস- দৈনিক আনন্দবাজার

মানুষ বনাম ভাইরাস ‘বিশ্বযুদ্ধ’ চলছে চার মাস ধরে। শত্রুপক্ষ খালি চোখে অদৃশ্য। ‘সার্স-কোভ-২’ (করোনাভাইরাস) সংক্রমণে পৃথিবী জুড়ে এ-পর্যন্ত দু’লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমিত ৩০ লাখেরও বেশি। দিনরাত এক করে গবেষণাগারে প্রতিষেধকের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু  সেক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আণুবীক্ষণিক এই শত্রুটিকে ভাল করে চেনা। অচেনা শত্রুর বিরুদ্ধে এই 'এনিমি ডিটেক্টিং'-এর সেই কাজটি করেছেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী।

এখনও পর্যন্ত ভাইরাসটির ১১টি টাইপ বা ধরন সম্পর্কে জানতে পারা গিয়েছে। এবার তার মধ্যে সব চেয়ে ‘সংক্রামক’ করোনাভাইরাস টাইপটিকে চিহ্নিত করলেন ভারতের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এর দুই বিজ্ঞানী নিধানকুমার বিশ্বাস ও পার্থপ্রতিম মজুমদার। সেই সঙ্গে কেন সেটি এতটা সংক্রামক, তা-ও বিশ্লেষণ করেছেন তাঁরা। 

‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এ সোমবার (২৭ এপ্রিল) প্রকাশিত হয়েছে তাদের এই গবেষণাপত্রটি।

গত বছর ৩১ ডিসেম্বর চিনের উহানে নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম কারও মৃত্যু হয়। এর পরে সীমান্ত পেরিয়ে উহান থেকে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯। পার্থপ্রতিম জানাচ্ছেন, পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক ভাবে মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটেছে ভাইরাসটির গঠনে। প্রত্যেক ভাইরাসে ডিএনএ বা আরএনএ থাকে। ‘সার্স-কোভ-২’ আরএনএ ভাইরাস। এই জিনোমের গঠনে সামান্য অদলবদল ঘটে গিয়েই ভিন্ন চেহারা নেয় ভাইরাস। বাড়ায় সংক্রমণ ক্ষমতা।

নিজেদের বাঁচার জন্যই তাদের এই লড়াই। ভাইরাস স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য তাদের বাসা বাঁধতে হয় কোনও প্রাণীর শরীরে। এ ক্ষেত্রে এবার তারা বেছে নিয়েছে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ আশ্রয় মানুষকে।

গোটা পৃথিবী থেকে পাওয়া ভাইরাসটির আরএনএ সিকোয়েন্সের তথ্য থেকে তাদের গতিবিধির উপরে নজর রাখছিলেন নিধান ও পার্থপ্রতিম। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৫টি দেশের ৩,৬৩৬ জন করোনা-রোগীর দেহ থেকে ভাইরাস-নমুনার আরএনএ সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণা করে দেখেন তারা। 

এ প্রসঙ্গে পার্থপ্রতিম জানান, অন্যান্য ভাইরাসের মতো এটিও নিজের চেহারা বদলেছে। এখনও পর্যন্ত ‘ও’, ‘এ২’, ‘এ২এ’, ‘এথ্রি’, ‘বি’, ‘বি১’-সহ মোট ১১ টাইপের ভাইরাসের ধরণ মিলেছে। এর মধ্যে চীনে প্রথম সংক্রমণ ঘটায় ‘ও’। আর সেটিই মূল টাইপ। বাকি ১০টি তৈরি হয়েছে সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে। এর মধ্যে এখন সবচেয়ে সংক্রামক ‘এ২এ’। 
পার্থ আরো বলেন, ‘‘অবাক করা বিষয়, বেশির ভাগ ভৌগোলিক এলাকাতেই দেখা যাচ্ছে দখল নিয়েছে নোভেল করোনাভাইরাসের ‘এ২এ’। ‘এ২এ’-র অস্তিত্ব প্রথম ধরা পড়ে ২৪ জানুয়ারি। মার্চ মাসের শেষের মধ্যে মোটামুটি অন্য সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ৬০ শতাংশ দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে এরাই।’’ নিধান জানান, ইউরোপ-আমেরিকায় সব চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ‘এ২এ’। আমাদের দেশে সেখান থেকে ‘এ২এ’ এসেছে। আবার চিন থেকে এসেছে ‘ও’। ইরান থেকে এসেছে ‘এথ্রি’। তিনি বলেন, ‘‘এ২এ এবং ও, দু’টোই শক্তিশালী। তবে এ২এ বেশি শক্তি ধরে।’’

তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন দুই বিজ্ঞানী। সার্স-কোভ-২ তার চরিত্র অনুযায়ী ফুসফুসে ঢুকে সংক্রমণ ছড়ায়। ভাইরাসটির স্পাইকে থাকা প্রোটিন মানুষের ফুসফুসে থাকা ‘এসিই২’ প্রোটিনটিকে কাজে লাগিয়ে কোষের উপরিভাগে ‘অ্যাঙ্কর’ করে বা জুড়ে যায়। এর পরে ফুসফুসে উপস্থিত অন্য একটি প্রোটিন তাকে কোষের ভিতরে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে। ‘এ২এ’-র ক্ষেত্রে তার স্পাইকে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিডটি ‘অ্যাসপারটিক অ্যাসিড’ থেকে বদলে ‘গ্লাইসিন’-এ পরিণত হয়। যা তার সংক্রমণ ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

দুই বিজ্ঞানীই জানাচ্ছেন, যেহেতু ভাইরাসটির মধ্যে এত পরিবর্তন ঘটছে, তাই ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক তৈরি বেশ চ্যালেঞ্জিং। ভাইরাসটি সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে না-পারলে প্রতিষেধক তৈরি হলেও তা সবার শরীরে কাজ করবে না। সেই কাজেই সাহায্য করবে নিধান ও পার্থপ্রতিমের গবেষণা। সেই বিষয়ে বেশ আশাবাদী এই দুই বাঙালি।

সূত্র- আনন্দবাজার

এসকে