২০১৯ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদী হামলার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে ইসলামোফোবিয়া বা ‘মুসলিম ভীতি’। রোববার কানাডায় গাড়িচাপায় মুসলিম পরিবারের চার সদস্যের নিহতের ঘটনাতেও একই আলামত দেখছে বিশ্ববাসী।
অন্টারিওর এ ঘটনা আতঙ্ক ছড়িয়েছে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে। ‘হেট ক্রাইম’ তথা ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক এমন হামলায় ক্ষোভ জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
একাধিক টুইটে ট্রুডো জানান, কানাডায় মুসলিম বিদ্বেষীদের কোন স্থান নেই। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশাপাশি দেশটির সকল মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
রোববার সন্ধ্যায় অন্টারিও প্রদেশের লন্ডন শহরে রাস্তা পার হওয়ার সড়কের পাশেই অপেক্ষা করছিল মুসলিম পরিবারটি। এসময় ২০ বছর বয়সী কিশোর নাথানিয়াল ভেল্টম্যান তাদের ওপর পিকআপ ট্রাক তুলে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই পরিবারের চার সদস্য নিহত হন।
নিহতদের মধ্যে ৪৬ বছর বয়সী সালমান আফজাল ও তার ৪৪ বছর বয়সী স্ত্রী মাদিহা ছাড়াও তাদের ১৫ বছরের মেয়ে ইয়ামনা ও তার ৭৪ বছর বয়সী দাদী রয়েছেন। এছাড়াও একই পরিবারের ছেলে ৯ বছর বয়সী ফায়েজ আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এদিকে স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে ট্রুডো বলেন, “অন্টারিওর লন্ডনের এই ঘটনায় আমি সত্যিই আতঙ্কিত। এই ঘৃণ্য হামলার শিকার পরিবার ও তাদের স্বজনদের পাশেই আছি আমরা। হাসপাতালে থাকা শিশুটিও আমাদের ভাবনাতে আছে। সে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমরা তার পাশে থাকবো।”
এছাড়াও শুধুমাত্রা অন্টারিওর লন্ডন এলাকাই নয় কানাডা সরকার সারা দেশের মুসলমানদের পাশে রয়েছে বলেও আশ্বস্ত করেছেন ট্রুডো। তিনি আরও বলেন, “লন্ডনসহ সারা দেশে যত মুসলিম রয়েছেন, জেনে রাখুন আমরা আপনার পাশে রয়েছি। আমাদের সমাজে মুসলিম বিদ্বেষের কোন জায়গা নেই। এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ সত্যিই উদ্বেগজনক এবং নিন্দনীয়। এখনই এসব বন্ধ করতে হবে।”
স্থানীয় পুলিশ এই হামলাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করছে। লন্ডন পুলিশের ইন্সপেক্টর পল ওয়েইট সাংবাদিকদের বলেন, “এই হামলার পূর্বপরিকল্পিত বলে প্রমাণ পেয়েছি আমরা। কেবল মুসলিম বলেই এই পরিবারকে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে।”
এদিকে লন্ডন শহরের মেয়র এড হোল্ডার জানান, “এটা মুসলিমদের গণহত্যার মতো ঘটনা। অবর্ণনীয় বিদ্বেষ থেকেই এ ধরণের হত্যাকাণ্ড চালানো সম্ভব।” এ ঘটনায় তিন দিনের জন্য লন্ডনে শোক পালন করা হবে।
কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হরজিৎ সাজন একে ‘ক্ষমার অযোগ্য’ ইসলামবিদ্বেষী হামলা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অন্টারিও জনপ্রতিনিধি ডগ ফোর্ড এ ঘটনায় সমবেদনা জানিয়ে বলেন, অন্টারিওতে ঘৃণা বা ইসলামফোবিয়ার কোন স্থান নেই। বিদ্বেষমূলক এই হত্যাকাণ্ডের জন্য অপরাধীকে অবশ্যই সাজা পেতে হবে।
অভিযুক্ত নাথানিয়াল ভেল্টম্যানের বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলা ও একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের অভিযোগেও মামলা হতে পারে তার বিরুদ্ধে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, সিবিসি নিউজ কানাডা ও অন্যান্য