নতুন জোট সরকার গঠনের মাধ্যমে শুক্রবার দীর্ঘ ১২ বছর পর সমাপ্তি ঘটেছে ইসরায়েলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর শাসনের। চুক্তি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন কট্টর জাতীয়তাবাদী দল ইয়ামিনা পার্টির নেতা নাফটালি বেনেট।
২০২৩ সালের অগাস্ট পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন বেনেট। এরপর দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন জোটের প্রধান ইয়ার লাপিডের কাছে। তবে বিবিসির খবর বলছে, নেতানিয়াহুর বিদায় হলেও কট্টর ইহুদি জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক নাফটালি বেনেটকে নিয়ে আশাবাদী নন অনেক ফিলিস্তিনি।
আল-জাজিরা জানায়, এরই মধ্যে ফিলিস্তিনিদের কয়েকটি দল ইসরায়েলের নতুন সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী বেনেট তার পূর্বসূরি নেতানিয়াহুর মতোই ডানপন্থী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবেন বলে মনে করছেন তারা।
সরকার পরিবর্তনকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কার্যালয় ইসরায়েলের ‘অভ্যন্তরীণ ইস্যু’ বলে উল্লেখ করলেও গাজা উপত্যকার স্বাধীনতাপন্থী দলগুলো ফিলিস্তিনের অধিকারের আদায়ের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
নেতানিয়াহুর দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ৪৯ বছর বয়সী নাফটালি বেনেট। ২০০৬ সাল থেকে দুবছর নেতানিয়াহুর চিফ অব স্টাফ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৮ সালে মতাদর্শের পার্থক্যের কারণে নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টি থেকে বেরিয়ে কট্টর ইহুদি দল ‘জিউয়িশ হোম’ পার্টিতে যোগ দেন।
২০১৩ সালে প্রথম এমপি হিসাবে নির্বাচিত হন বেনেট। ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনের সকল অঞ্চলের প্রকৃত মালিক ইসরায়েল – এমনটাই বিশ্বাস তার। এমনকি পশ্চিম তীরকে হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত ‘জুদেয়া-সামারিয়া’ নামে অভিহিত করে থাকেন এই নেতা। তাই নেতানিয়াহুর চাইতেও বেশি ডানপন্থী ও জাতীয়তাবাদী হিসেবেই পরিচিত তিনি।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় ইসরায়েলের অধিকৃত পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলি কর্তৃত্বের পক্ষেও অবস্থান জানিয়েছেন বেনেট।
অতীতে ইহুদি বসতি-স্থাপনকারীদের সংগঠন ইয়েশা কাউন্সিলের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ আর ইহুদি বসতি স্থাপনের কট্টর সমর্থক তিনি। বিবিসি জানায়, স্বাধীন ফিলিস্তিন ও দ্বিরাষ্ট্র নীতিরও ঘোর বিরোধী নাফটালি বেনেট।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সাত দলের জোটের শরিক হিসাবে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব মতাদর্শকে খুব একটা প্রাধান্য দিতে পারবেন না। কেননা বেনেটের জোটে ইসলামপন্থী আরব দল ও বামপন্থী দল মেরেতজও রয়েছে। এই দুই দলই পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপনের বিরোধী। তাই ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে শরীকদের সঙ্গে আপোষ করেই চলতে হবে বেনেটকে।
একই রকম বার্তা দিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতি ফিলিস্তিন জানায়, বেনেটের জোট সরকার ক্ষমতায় কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি। যতদিন না ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও পূর্ব জেরুজালেমকে এর রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দিবে ততদিন কোন সরকারই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।