বাস্তিল দুর্গের পতন ও ফরাসী বিপ্লব

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২১, ১১:০২ এএম বাস্তিল দুর্গের পতন ও ফরাসী বিপ্লব
বাস্তিল দুর্গ। ছবি-সংগৃহীত ।

১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্স রাজ্যের প্যারিসের কুখ্যাত বাস্তিলে বিক্ষোভ  হয়। ফ্রান্সের সম্রাট ষোড়শ লুই তৃতীয় শ্রেণীর বুর্জোয়াদের কাছে আত্মসমর্পণ করলেও তিনি পুরোনো রাজতন্ত্রের প্রতীক হয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। শুধুমাত্র সেই কারণে ফ্রান্সের প্রধান অর্থমন্ত্রী নেকারকে সরিয়ে দিয়ে সেই পদে প্যারিস ও ভার্সাই এর সেনা মোতায়েন করেন। এরপর ফ্রান্সের উত্তপ্ত জনতা ১৭৮৯ সালের ১৪ই জুলাই বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে ও দখল করে নেয়।

এই বাস্তিল দুর্গের পতনের মধ্য দিয়ে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়। এই বিপ্লব ছিল তদানীন্তন ফ্রান্সের শত শত বছর ধরে নির্যাতিত ও বঞ্চিত "থার্ড স্টেট" বা সাধারন মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এই বিপ্লবের আগে সমগ্র ফ্রান্সের ৯৫ শতাংশ সম্পত্তির মালিক ছিল মাত্র ৫ ভাগ মানুষ। অথচ সেই ৫ ভাগ মানুষই কোনো আয়কর দিত না এবং এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করত তাদেরকে এই বাস্তিল দুর্গে বন্দী করে নির্যাতন করা হতো। বাস্তিল দুর্গ ছিল স্বৈরাচারী সরকারের নির্যাতন ও জুলুমের প্রতীক। একবার কোনো বন্দী সেখানে প্রবেশ করলে জীবন নিয়ে আর ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকত না । কারাগারের ভিতরেই মেরে ফেলা হতো অসংখ্য বন্দীদের। ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গের আশেপাশের বিক্ষুব্ধ মানুষ বাস্তিল দুর্গ অভিমুখে রওনা হয়।  দুর্গের সৈন্যরাও ভিতর থেকে কামান দাগাতে থাকে। প্রায় দুইশো বিপ্লবী হতাহত হয় । এরপর চারিদিক থেকে উত্তেজিত বিক্ষুব্ধ জনতা বাস্তিল দুর্গ ধ্বংস করে। জয় হয় সাম্য, মৈত্রী এবং স্বাধীনতার। এই ঘটনাটিই ফ্রান্সের জাতীয় উৎসব বলে পালন করা হয়। 

বাস্তিল দুর্গের পতনের পর ফ্রান্সের রাজতন্ত্র খানিকটা শিথিল হয়ে পড়ে। আতঙ্কিত রাজা ফ্রান্সের জাতীয় পতাকাকে মেনে নেয়। জনগণের নির্ধারিত মেয়রকে প্যারিস পৌরসভার প্রধান করা হয়।  স্বৈরতন্ত্রের প্রতীক বাস্তিল দুর্গের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে রাজতন্ত্র ক্ষমতা হারায়। ফ্রান্সে রাজতন্ত্র পতনের শুরু হলে, গণতন্ত্র শক্তিশালী হতে শুরু করে। জনগণের আক্রমণে ফ্রান্সের বাস্তিল দুর্গের পতন হলে সম্রাট রা বুঝতে পারে, তাদের সময় বেশিদিন থাকবে না । এরপর থেকে গণতন্ত্র জোর বাঁধতে শুরু করে ও ফ্রান্সে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়।

ফরাসী বিপ্লব ইউরোপ এবং নতুন বিশ্বের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল। মানব ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তনের নির্ণায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। এটি সামন্তবাদের অবসান ঘটায় এবং পৃথকভাবে সংজ্ঞায়িত ব্যক্তিগত মুক্তির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করেছিল। 


 

জাগরণ/এসকেএইচ