খনিজ সম্পদে ভরা আফগানিস্তান!

বিশ্ব ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২১, ০৩:২৩ পিএম খনিজ সম্পদে ভরা আফগানিস্তান!
আফগানিস্তানে পাথরের গায়ে লেগে রয়েছে তামা। ছবি-আনন্দবাজার

আফগানিস্তানের মাটির নিচে অনেক ধরনের মূল্যবান খনিজ সম্পদ রয়েছে, যা দিয়ে এক দশকেই দেশটির অর্থনীতি পাল্টে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু সেই সম্পদ তুলে আনার কলাকৌশল ও কাজে লাগানোর বিজ্ঞান কি তালেবানের আছে?    

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, এই খনিদ সম্পদের খোঁজ ছিল না তালেবানদের কাছে। গত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে আমেরিকার সেনাবাহিনী ও সেই দেশের ভূতত্ত্ববিদরা সেই খবরই পেয়েছিল বছর দশেক আগে। আফগানিস্তানে রয়েছে ১ লাখ কোটি ডলার মূল্যের খনিজ সম্পদ। এর মধ্যে অন্যতম খনিজ লিথিয়াম মৌল। দূষণহীন যান চলাচলের ব্যাটারি, মোবাইল ফোনের ব্যাটারির জন্য যা আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত। অথচ প্রকৃতিতে দুর্লভ এবং‌ খনি থেকে সেই মৌলের নিষ্কাশনের পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল, যা বহুল ব্যবহারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তানের দারিদ্র্যতা দূর করতে পারে এই খনিজ সম্পদ। তাছাড়া রাশি রাশি তামা, সোনা, আকরিক লোহাসহ নানা ধরনের বিরল মৌল রয়েছে বিভিন্ন প্রদেশের মাটির নিচে। এসব দুর্লভ খনিজ সম্পদই ঘুরে দাঁড়ানোর হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের। মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে আফগান অর্থনীতির।

শুধু বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ’র বিশেষজ্ঞরা নন, ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের অর্থনীতির মোড় ঘোরানো কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে কি এখন সত্যিই নিঃসংশয় তালেবানরা? বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বিষয়ে তালেবানদেরও সংশয়ে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, দুই দশক আগের তালেবান শাসনের অভিজ্ঞতার পর কোনো পশ্চিমা দেশ খুব শিগগির আফগানিস্তানে পুঁজি বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে, এমন ভাবনা অর্থহীন। আসতে রাজি হবেন না কোনো বিদেশি ধনকুবের, পুঁজি বিনিয়োগকারীও।

আফগানের অর্থনীতির হাল যে কতটা করুণ, তা একটি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। আমেরিকার কংগ্রেসের রিসার্চ সার্ভিস এ বছরের জুনে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে জানানো হয়, ২০২০ সালে আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার (৩৮ কোটি ৯২ লাখ ৮ হাজার ৩৪৬ জন) প্রায় ৯০ শতাংশই সরকার নির্ধারিত দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছেন। এর অর্থ, এই পরিমাণ আফগান নাগরিকের উপার্জন দিনে ২ ডলারের বেশি নয়। তালেবানদের উৎখাত করে দুই দশক ধরে সে দেশে একের পর এক গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম হওয়ার পরেও এটাই ছিল আফগান অর্থনীতির গত বছরের চিত্র।

এ বছরের মার্চে দেওয়া বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, ‘আফগানিস্তানের অর্থনীতি অত্যন্ত ভঙ্গুর আর বিদেশি ত্রাণ ও অর্থ সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। বেসরকারি শিল্পোদ্যোগের উন্নয়ন ও শিল্প, ব্যবসার বহুমুখী হয়ে ওঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বেশ কয়েকটি বিষয়। এর মধ্যে রয়েছে, নাগরিকদের নিরাপত্তার অভাব, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব, দুর্বলভাবে পরিচালিত সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিল্প, ব্যবসা পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা, ব্যাপক দুর্নীতি এবং শান্তিতে শিল্প, ব্যাবসা করার পরিবেশের অভাব।’

ইকোলজিক্যাল ফিউচার্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞানী ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রড শুনোভার জানান, আফগানিস্তানের মাটির নিচে কী পরিমাণ খনিজ সম্পদ রয়েছে, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের গতিতে রাশ টানতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে সার্বিকভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি পথে নামাতে হবে। আর তার জন্য প্রয়োজন ব্যাটারি রিচার্জ করার জন্য জরুরি লিথিয়াম, তামা, অ্যালুমিনিয়াম ও নিওডিয়াম মৌল। খনিজ লিথিয়াম সবচেয়ে বেশি মজুত রয়েছে এখন বলিভিয়ায়। আফগানিস্তানের ভাণ্ডার তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। বিশ্বে লিথিয়াম, কোবাল্ট ও নিকেলের মতো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মৌলগুলোর সরবরাহে রয়েছে যে প্রথম তিনটি দেশ (মোট ৭৫ শতাংশ)— চিন, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ও অস্ট্রেলিয়া— আফগানিস্তানের খনিজ ভাণ্ডার পাল্লা দিতে পারে তার সঙ্গেও। এই খনিজগুলো ব্যবহার করে এক দশকের মধ্যেই এশিয়ার এই অঞ্চলের ধনীতম দেশ হয়ে উঠতে পারে আফগানিস্তান।

বাধা কোথায়?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরে শুধু খনিজ সম্পদই আফগানিস্তানকে এনে দেয় ১০০ কোটি ডলার। কিন্তু তার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই আমজনতার উন্নয়নে লাগতে পারে না দুর্নীতির জন্য। নতুন নতুন খনির সন্ধান ও খনিজের উত্তোলন করা এত দিন সম্ভব হয়নি প্রযুক্তি ও পরিকাঠামোর অভাব, সরকারি দূরদর্শীতার অপ্রতুলতায়। 

এবার কি তালেবান যুগে আফগানিস্তানে পরিস্থিতি বদলাবে? ক্ষমতার দখল নিজেদের হাতে রাখতে কি এবার বিপুল খনিজ সম্পদের সুফল দেশের অর্থনীতিকে দিতে পারবেন তালেবানরা? সংশয় থেকেই যাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।

জাগরণ/এমএইচ