আবারও কি মহামন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব, নাকি মানবতা বাঁচাতে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধানদের বিবেক জাগ্রত হবে- এই প্রশ্ন সামনে রেখে শুরু হলো বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বার্ষিক সভা।
প্রায় তিন বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে শুরু হলো বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সাধারণ সভা।
স্থানীয় সময় সোমবার (১০ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া সাত দিনের বৈঠকে অংশ নিচ্ছে বিশ্বের ১৮৮টি সদস্য দেশ। এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের নেতৃত্বে আট সদস্যের প্রতিনিধি দলে যোগ দিয়েছে এ সম্মেলনে।
বার্ষিক সভার প্রথম দিনের সকালে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার আলোচনায় হয়।
তাদের আলোচনায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরবর্তী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে শ্লথ করে মন্দার শঙ্কার কথা উঠে আসে।
তারা বলেন, ২০২৬ সাল পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় চার ট্রিলিয়ন ডলার যা জার্মানীর অর্থনীতির সমান।
ওই সভায় দুই শক্তিশালী উন্নয়ন সহযোগী চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘সেন্সলেস ওয়ার’ আখ্যায়িত করে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
সভায় বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অনেকেই হয়তো সময়মতো ঋণের কিস্তি শোধ দিতে পারবেনা। কাজেই লেনদেন ভারসাম্যের চাপে থাকা সদস্যদের ৪৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের কিস্তি পরিশোধে উন্নয়ন সহযোগীদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, বিশ্বব্যাপী মন্দা ঝুঁকি বেড়ে চলেছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এক তৃতীয়াংশ বিশ্ব অর্থনীতির অন্তত দুই অর্থবছর খারাপ সময় যাবে। এই মন্দাভাবের কারণে এখন থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত বিশ্ব চার ট্রিলিয়ন ডলার হারাবে, যা জার্মানির জিডিপির সমান।
তিনি বলেন, কোভিডের কারণে বাজারে যোগানের ঘাটতি ও অপ্রয়োজনীয় রুশ ইউক্রেন যুদ্ধের ফসল এই মন্দা। এতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে খাদ্য পণ্যের দাম বেড়েছে। বিপরীতে অর্থের সঙ্কটের ফলে প্রতিটি দেশই ভুগছে।
এসময় বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেন, স্বল্প সুদে সহজ শর্তে যে ঋণ পেয়ে আসছে উন্নয়নশীল দেশগুলো, মন্দার এ সময়ে তা পরিশোধ নীতি কি হবে সেটা ভেবে তিনি শঙ্কিত।
তিনি বলেন, মুদ্রার অবমূল্যায়ন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বোঝা বাড়াচ্ছে। এতে সুদের হার বাড়তে পারে। মূল্যস্ফীতির চাপজনিত সমস্যা তো আছেই। এতে করে এসব দেশের দরিদ্র মানুষগুলোর বেঁচে থাকার লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়বে।
বাংলাদেশের মতো যেসব দেশ বিশ্ব ব্যাংকের আইডিএ ঋণ নেয় তাদের অনেকেই ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। এখন বহুজাতিক ব্যাংক, উন্নয়ন সহযোগীদের একত্রে আমাদের ওই জায়গায় গুরুত্ব দেয়া দরকার। ৪৪ বিলিয়ন ডলারের কিস্তি যে সময় মতে শোধ দেয়া হবে না সে ব্যাপারে তাদের স্বস্তি দিতে হবে।
জাগরণ/আন্তর্জাতিক/এসএসকে